ঢাকা বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫

একসঙ্গে চলাফেরা, একসঙ্গে মৃত্যু, তিন বন্ধুকে পাশাপাশি কবরে দাফন

একসঙ্গে চলাফেরা, একসঙ্গে মৃত্যু, তিন বন্ধুকে পাশাপাশি কবরে দাফন

মো. সাইফুল ইসলাম, মো. আশিক মিয়া এবং মো. অপু মিয়া

শিবপুর (নরসিংদী) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১০ জুন ২০২৫ | ২১:৫০ | আপডেট: ১০ জুন ২০২৫ | ২১:৫৫

ছোটবেলা থেকে একসঙ্গে চলাফেরা করতেন। ছিলেন একে অপরের আত্মার বন্ধু। তিন বন্ধু মিলে এলাকায় প্রীতি ফুটবল খেলার আয়োজন করেছিলেন। খেলার জন্য জার্সি কিনতে গিয়েছিলেন নরসিংদী শহরে। মোটরসাইকেলে বাড়িতে ফেরার পথে বাসচাপায় তিনজন নিহত হন। পরে জানাজা শেষে পাশাপাশি তিনটি কবরে তাদের দাফন করা হয়েছে।

নরসিংদীর শিবপুরে সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে তিনজন নিহত হন। শিবপুরের ইটাখোলা-শিবপুর আঞ্চলিক সড়কের বান্দারদিয়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। স্বজনদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই তিনজনের লাশ হস্তান্তর করা হয়।

নিহত তিনজন হলেন-শিবপুরের মাছিমপুর ইউনিয়নের মির্জাকান্দি এলাকার মনির মোল্লার ছেলে মো. সাইফুল ইসলাম (২৫), মো. বদু মিয়ার ছেলে মো. আশিক মিয়া (২৩) ও মো. বাবুল মিয়ার ছেলে মো. অপু মিয়া (২০)। সাইফুল মাছের ব্যবসা করতেন, আশিক ট্রাকচালকের সহযোগী ও অপু গাড়িচালক ছিলেন।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, এলাকার একটি প্রীতি ফুটবল খেলার জার্সি কিনতে সোমবার রাতে তিন বন্ধু মিলে এক মোটরসাইকেলে করে নরসিংদী শহরে গিয়েছিলেন। জার্সি কিনে বাড়িতে ফেরার পথে রাত সাড়ে ১১টার দিকে ইটাখোলা-শিবপুর আঞ্চলিক সড়কের বান্দারদিয়া পেট্রোল পাম্প এলাকায় অনন্যা পরিবহনের একটি বাস আরেকটি বাসকে ওভারটেক করতে গেলে মোটরসাইকেলের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে তারা সড়কে ছিটকে পড়েন। পরে পেছনে থাকা বাসটি তাদের চাপা দেয়। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে দ্রুত শিবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠান। হাসপাতালে নেওয়ার পথেই সাইফুল ইসলাম ও আশিক মিয়ার মৃত্যু হয়। পরে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন। এ সময় আহত অপু মিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজধানীর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। ঢাকায় নেওয়ার পথে তিনিও মারা যায়।পরে তিনজনের লাশ থানায় আনা হয়। সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির পর আজ মঙ্গলবার সকালে তিনজনের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছিল। তবে স্বজনেরা ‘কোনো অভিযোগ নেই’ উল্লেখ করে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ নেওয়ার আবেদন করলে বেলা আড়াইটার দিকে তিনজনের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ।

নিহত তিনজনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, স্বজনেরা আহাজারি করছেন। এলাকার কয়েক শ মানুষ লাশ দেখতে জড়ো হয়েছেন। একদিকে এলাকার ঈদগাহ মাঠে চলছে জানাজার প্রস্তুতি। অন্যদিকে স্থানীয় কবরস্থানে পাশাপাশি তিনটি কবর খোঁড়া হচ্ছে। 

দাফনের আগে নিহত আশিকের বাবা বদুরুদ্দিন বলেন, ‘ছেলে তো আর নাই। লাশ কাটাছেঁড়া হোক চাই না। আর অভিযোগ করেই-বা কী হবে? ছেলেকে তো আর ফিরে পাব না।’ 

তিনি বলেন, তিনজন ছোটবেলা থেকে একসঙ্গে বড় হয়েছে। মৃত্যুও একসঙ্গে হলো। পাশাপাশি তিনটি কবরে দাফন করার প্রস্তুতি চলছে।

নিহত সাইফুলের বাবা মনির মোল্লা বলেন, গতকাল বিকেল চারটার দিকে নিজের মোটরসাইকেলে দুই বন্ধুকে নিয়ে নরসিংদী শহরে জার্সি কিনতে যান সাইফুল। রাতে বাড়িতে ফেরার পথে একটি বাস অন্য আরেকটি বাসকে ওভারটেক করতে গিয়ে চাপা দিলে তিনজন মারা যান। যেহেতু এটি দুর্ঘটনা, তাই কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ নেই। এ জন্য ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ নেওয়ার আবেদন করেছিলেন।

শিবপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আফজাল হোসাইন বলেন, নিহত তিন তরুণের বাবা থানায় এসে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ হস্তান্তরের আবেদন করেন। দুপুরে আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছে।

আরও পড়ুন

×