চাল বরাদ্দের তালিকায় মৃত ব্যক্তির নাম

ছবি: ফাইল
মেহেরপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৯ জুন ২০২৫ | ০৪:১৬
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর মামলার কারণে আত্মগোপনে যান গাংনীর রায়পুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম সাকলায়েন সেপু। এর পর প্রভাব খাটিয়ে অন্য ইউপি সদস্যদের চাপে ফেলে প্যানেল চেয়ারম্যান বনে যান ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সারগিদুল ইসলাম। শুরু হয় তাঁর দাপট। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই নানা প্রকল্পের বরাদ্দ চাল নয়ছয়সহ উঠতে থাকে নানা অভিযোগ।
সম্প্রতি সারগিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে আরও কয়েকটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে রয়েছে– ঈদুল আজহা উপলক্ষে সরকারি চাল উপহারের তালিকায় মৃত ব্যক্তির নাম ঢুকিয়ে দেওয়া এবং ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট (ভিডব্লিউবি) প্রোগ্রামের আওতায় নারীদের চাল আত্মসাতের অভিযোগ। এমনকি মাতৃত্বকালীন ভাতার কার্ড ও কৃষি প্রণোদনা বিতরণে অনিয়মের বিষয়েও নানা জল্পনা আছে।
ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত তথ্য ঘেঁটে জানা যায়, ঈদুল আজহা উপলক্ষে সরকার দরিদ্র অসচ্ছল ব্যক্তিদের মাঝে ঈদ উপহার দেওয়ার জন্য ১০ কেজি করে তিন হাজার ২০০ জনের জন্য চাল বরাদ্দ দেয়। বিতরণ শেষে প্যানেল চেয়ারম্যান সারগিদুল ইসলাম প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার দপ্তরে চাল পাওয়া ব্যক্তিদের তালিকা জমা দেন। ওই তালিকার ২৯৭১ নম্বরে আছে গোপালনগর গ্রামের মৃত মোফাজ্জেল হকের নাম।
মোফাজ্জেল হক ২০২৩ সালের ৭ এপ্রিল মারা যান বলে নিশ্চিত করেছেন ছেলে মিনারুল ইসলাম। তিনি বলেন, বাবার নামে চাল বরাদ্দ হয়েছে কিনা, জানেন না। তবে নিজের জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে একজনের মাধ্যমে ১০ কেজি চাল পেয়েছেন।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভিডব্লিউবি প্রকল্পের আওতায় অসচ্ছল নারীরা প্রতি পাঁচ মাস পরপর মাসে ৩০ কেজি করে চাল পান। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে মাসের বরাদ্দ চাল রায়পুরের নারীরা পেয়েছে ৫ জুন। তাদের কেউ তিন মাসের, কেউ চার মাসের চাল পেয়েছেন। বাকি চাল প্যানেল চেয়ারম্যান সারগিদুল ইসলাম আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ তাদের।
চাঁদপুর গ্রামের মো. আবুছুদ্দীনের স্ত্রী আছিয়া খাতুনের নামে ভিডব্লিউবির একটি কার্ড আছে। পাঁচ মাস পরপরই মাসে ৩০ কেজি করে চাল পান তারা। আবুছুদ্দীনের ভাষ্য, জানুয়ারি-মে মাসের চাল জুনের শুরুতে পেয়েছেন। এ চাল একবারে বরাদ্দ হলেও পেয়েছেন তিন মাসের চাল। একই রকম ভাষ্য, ওই গ্রামের আব্দুল রহিমের। তাঁর পুত্রবধূ হেনা খাতুন ও শিমুলতলা গ্রামের রেক্সোনা খাতুনও তিন মাসের চাল পেয়েছেন।
ভুক্তভোগী অন্যরা নাম প্রকাশে রাজি হননি। তাদের ভাষ্য, কোথাও অভিযোগ দিলে তাদের কার্ড বাতিল হবে। নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হবে।
কয়েকজন ইউপি সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্যানেল চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েই সারগিদুল ইসলাম মামলার ভয় দেখিয়ে তাদের জিম্মি করে ফেলেন। পরে মাতৃত্বকালীন ভাতার কার্ড ও কৃষি প্রণোদনা বিতরণে অনিয়ম শুরু করেন। খাজনা আদায়ের টাকা ব্যাংকে না রেখে ইচ্ছেমতো খরচ করছেন। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) যদি তদন্ত করলে সব অভিযোগের সত্যতা মিলবে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে প্যানেল চেয়ারম্যান সারগিদুল ইসলাম বলেন, ‘লেখেন, সমস্যা নেই। জেল-ফাঁসি যা হয় তাই হবে। কাজ করতে গেলে ভুল হতেই পারে। আমি সচ্ছতার সঙ্গে পরিষদ চালানোর চেষ্টা করছি।’
- বিষয় :
- মেহেরপুর