চোখে দেখেন না বলে বয়স্কভাতা কার্ড মেলেনি বৃদ্ধার!

সারেদা খাতুন
নাসিরনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২২ আগস্ট ২০২০ | ০০:৩১
সারেদা খাতুন, বয়স প্রায় ৮৪ বছর। বয়সের ভারে ন্যুব্জ হয়ে পড়া সারেদার ঠাঁই হয়েছে অন্যের বাড়িতে। চোখের দৃষ্টি হারিয়েছেন প্রায় ১০ বছর হলো। বার্ধ্যক্যজনিত নানা রোগ লেগেই আছে। চিকিৎসা যে করাবেন তারও সাধ্য নেই। বয়স্ক ভাতার কার্ড পেতে বার বার জনপ্রতিনিধিদের দ্বারস্থ হলেও আশ্বাস ছাড়া কিছুই মেলেনি।
এদিকে, স্থানীয় ইউপি সদস্যরা বলছেন, সারেদা চোখে দেখেন না, চলাফেরাও করতে পারন না। তাই তার বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেওয়া হয়নি।
সারেদা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার গোকর্ণ ইউনিয়নের নূরপুর গ্রামের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের প্রয়াত ছেনু মিয়ার স্ত্রী। প্রায় ৩০ বছর আগে স্বামী ছেনু মিয়া মারা যান। তার চার মেয়ে ও দুই ছেলে।
সারেদার দুই ছেলের একজন রিকশা চালান ও অন্যজন অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালান। ছেলের সংসারের অভাব-অনটন নিত্যদিনের সঙ্গী। যখন যার বাড়িতে ঠাঁই হয়, তার বাড়িতেই থাকেন সারেদা।
জাতীয় পরিচয় অনুযায়ী বয়স ৮৪ বছর হলেও স্থানীয়দের দাবি, সারেদার বয়স ১১৫ বছর।
সরেজমিনে কথা হলে সারেদা সমকালকে বলেন, ‘আমার আপন বলতে কেউ নাই। আমি হাঁটতে পারি না। চোখে দেখি না। চান সুরুজ (চাঁদ-সূর্য) কিছুই দেখি না। থাহনেরও জায়গা নাই। আমারে কেউ একটা ভাতা কার্ড কইরা দেয় না। আমি অহন থাকি পাশের বাড়ির হামিদার ঘরে।’
প্রতিবেশী হামিদার বেগম বলেন, বৃদ্ধ সারেদা একটি পরিত্যক্ত ঘরে থাকতেন। বন্যার পানিতে ঘরটা ভেঙে গেছে। ওই ঘরে থাকার মতো পরিবেশ নেই। তাই আমি তাকে আমার ঘরে থাকতে দিয়েছি। তার ছেলেরা দিন আনে, দিনে খায়। তাই এলাকার মানুষের কাছেই থাকেন তিনি।
ইউপি সদস্য ওহেদ মিয়া বলেন, সারেদা খাতুন চোখে দেখে না এবং চলাফেরাও করতে পারে না। তাই তাকে বয়স্কভাতা কার্ড করে দেওয়া হয়নি।
কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, বয়স্কভাতা কার্ড হলেও তার টাকা কে তুলে দেবে? সেজন্য তার কার্ড হয়নি।
গোকর্ণ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ছোয়ব আহাম্মেদ জানান, ৮৫ বছরের কোনো বৃদ্ধা বয়স্ক ভাতা পায় না এমন তথ্য আমার জানা নেই। কাগজপত্র নিয়ে আসলে আমি তার জন্য ভাতার ব্যবস্থা করে দেব।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আবুল খায়ের বলেন, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, বয়স্ক ভাতা পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীর বয়স সর্বনিম্ন ৬২, আর পুরুষের বয়স সর্বনিম্ন ৬৫ বছর। সে অনুযায়ী সারেদা খাতুন বয়স্ক ভাতা পাওয়ার যোগ্য।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজমা আশরাফী জানান, আবেদন করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।