আইসিডিডিআর,বি গবেষণা
শিশুদের মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের অন্যতম কারণ আর্সেনিক

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২২ ডিসেম্বর ২০২২ | ০৮:৩৪ | আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০২২ | ০৮:৫৪
আর্সেনিকযুক্ত পানি শিশুদের মাঝে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ বা রেজিস্ট্যান্সের অন্যতম কারণ বলে জানিয়েছে বাংলাদেশে অবস্থিত আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র (আইসিডিডিআর,বি)। গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি আরও জানিয়েছে, অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স বিশ্বব্যাপী মানুষের হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যুর অন্যতম কারণ। যদিও অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের প্রধান কারণ অ্যান্টিবায়োটিকের অত্যধিক ব্যবহার এবং অপব্যবহার। তবে প্রাকৃতিক উপাদান যেমন- ভারী ধাতুগুলোও রেজিস্ট্যান্সের কারণ হতে পারে।
বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি এই তথ্য জানিয়েছে আইসিডিডিআর'বি। সেই সঙ্গে এ সংক্রান্ত একটি গবেষণা প্রতিবেদনও 'প্লস প্যাথোজেন্স' শীর্ষক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে পানিতে আর্সেনিকের মাত্রা বেশি আছে এমন এলাকায় নতুন এই গবেষণা চালিয়েছে আইসিডিডিআর,বির বিজ্ঞানী এবং সহযোগীরা। ওইসব অঞ্চলে শিশুদের মল এবং পানিতে অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী ই.কোলাই এর উচ্চ প্রাদুর্ভাব লক্ষ্য করা গেছে। ই.কোলাই মূলত একটি ব্যাকটেরিয়া যা সাধারণত উষ্ণ রক্তের প্রাণিদের অন্ত্রের নিচের অংশে পাওয়া যায়। এটি ডায়রিয়ার অন্যতম কারণ। এছাড়াও কম আর্সেনিকযুক্ত অঞ্চলের তুলনায় খাবার পানিতে আর্সেনিক দূষণের মাত্রা বেশি- এমন এলাকায় অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের মাত্রাও বেশি দেখা গেছে।
গবেষকরা আশঙ্কা করেছেন, বাংলাদেশে আর্সেনিকের প্রাদুর্ভাবযুক্ত এলাকার শিশুদের দেহে আর্সেনিকের উপস্থিতি এবং অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের মধ্যকার সম্পকে জনস্থাস্থ্যের জন্য একটি উদ্বেগের বিষয়। তাই আর্সেনিকের প্রভাব ও বিস্তার কমানোর প্রচেষ্টা আরও জোরদার করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে গবেষক দলের প্রধান ও আইসিডিডিআর,বির অ্যাডজাঙ্কট সায়েন্টিস্ট এবং যুক্তরাষ্টের ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম বলেন, আর্সেনিকের মতো ভারী ধাতু পরিবেশে অ্যান্টিবায়োটিকের চেয়ে বেশি স্থিতিশীল। এ সব ধাতু দীর্ঘসময় ধরে ব্যাকটেরিয়ার ওপর প্রভাব বিস্তার করে। যার ফলে মানুষের মধ্যে অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল রেজিস্ট্যান্স গড়ে উঠছে। অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম আরও বলেন, 'এর ফলে কখনও অ্যান্টিবায়োটিক নেয়নি, তবে আর্সেনিকের মতো ধাতুর সংস্পর্শে এসেছে- এমন মানুষ এবং বিভিন্ন প্রাণির দেহে অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী বিভিন্ন অণুজীব তাদের বসতি গড়ে তুলতে পারে। অন্যান্য কনফাউন্ডারের তুলনায় গবেষণা থেকে আমরা অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের যে ফলাফল পেয়েছি, সেটি নিয়ে আরও গবেষণা করলে অনেক বেশি উপকার পাওয়া সম্ভব। তবে, পরিবেশে যাতে ভারী ধাতুর প্রভাবে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স না হয়, সে বিষয়ে খেয়াল রাখার পাশাপাশি ওষুধ ও কৃষিতে অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল ব্যবহারে দায়িত্বশীল হতে হবে। এদিকে, আইসিডিডিআর,বির বর্তমান গবেষণার ফলাফলগুলো বিবেচনা করে দেশের বিভিন্ন পরিবেশে সীসা, পারদ ও লোহার মতো অন্যান্য ভারী ধাতুর প্রভাব সম্পর্কে আরও অনুসন্ধান করার এখনই সঠিক সময় বলে উলেল্গখ করেছেন গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির অ্যাসোসিয়েট সায়েন্টিস্ট মোহাম্মদ বদরুল আমিন।
অন্যদিকে, আইসিডিডিআর,বির নতুন এই গবেষণার গবেষক ও ডক্টর ইসলামের ল্যাবের পোস্ট ডক্টরাল গবেষক প্রভাত তালুকদার বলেছেন, আমরা দেখেছি- আর্সেনিক প্রতিরোধী ই.কোলাইয়ের একটি নির্দিষ্ট গ্রুপের অ্যান্টিবায়োটিকের, বিশেষ করে তৃতীয় প্রজন্মের সেফালোস্ত্রোরিনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। যা সাধারণত ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের চিকিৎসার জন্য ব্যবহূত হয়। আমাদের বর্তমান গবেষণা এই আইসোলেটগুলোর মধ্যে আর্সেনিক এবং অ্যান্টিবায়োটিকের সহ-প্রতিরোধের প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ করে চলেছে।
উল্লেখ্য, গবেষকরা চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ ও মতলব উপজেলার ১০০টি পরিবারের (প্রত্যেক উপজেলায় ৫০টি) মা ও শিশুদের মল এবং খাবার পানির নমুনা সংগ্রহ করেছেন। এরমধ্যে হাজীগঞ্জে বসবাসকারী পরিবারের মানুষেরা অগভীর নলকূপের পানি পান করে। গবেষণায় এখানকার পানিতে আর্সেনিকের উচ্চমাত্রা পাওয়া গেছে। আর মতলবের পরিবারের সদস্যরা আর্সেনিকমুক্ত গভীর নলকূপ থেকে তাদের খাবার পানি সংগ্রহ করেন।