শিশুশ্রম থাকলে অর্থনৈতিক নৈতিকতা থাকে না: শারমীন মুরশিদ

ছায়া সংসদে সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ। ছবি: সমকাল
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২১ জুন ২০২৫ | ১৭:৩৮ | আপডেট: ২১ জুন ২০২৫ | ১৭:৪৭
কোনো সমাজে শিশুশ্রম থাকলে সেখানকার অর্থনীতির নৈতিকতা থাকে না বলে মন্তব্য করেছেন সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ।
তিনি বলেন, শিশুশ্রম সম্মানজনক নয়। এটি শিশুর অধিকার হরণ করে। দারিদ্র ও শিশুশ্রম ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই শিশুশ্রম নিরসনে দারিদ্র বিমোচনকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। শিশুশ্রম নিরসনে রাষ্ট্র ও সমাজকে মুখোমুখি দাঁড় করানো যাবে না। রাষ্ট্র, সমাজ, প্রাইভেট সেক্টর, উন্নয়ন সহযোগীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।
শনিবার ঢাকার এফডিসিতে বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত ‘শিশুশ্রমের প্রধান দায় রাষ্ট্রের নয়, সমাজের’ শীর্ষক ছায়া সংসদে তিনি এসব কথা বলেন। এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি।
শারমীন মুরশিদ বলেন, বিগত সরকারের সময় দুর্নীতি আমাদের সব অগ্রযাত্রাকে উইপোকার মতো খেয়ে ফেলেছে। সে সময়ে প্রত্যেক প্রকল্পেই দুর্নীতি হয়েছে। দুর্নীতি নিরসনে অন্তর্বর্তী সরকার জিরো টলারেন্স দেখিয়ে আসছে। আগামীতে যারা ক্ষমতায় আসবেন তারা যেন দুর্নীতি না করেন সেই প্রত্যাশা থাকবে।
তিনি বলেন, একটি স্বৈরাচার সমাজব্যবস্থার ভেতরে আমরা একটি সংবেদনশীল, যত্নশীল পলিসি প্রত্যাশা করতে পারি না। বিগত সরকার বাল্যবিয়ের মতো একটি সংবেদনশীল সামাজিক বিষয়ের সংজ্ঞা পরিবর্তনের মাধ্যমে বিয়ের বয়স ১৮ বছর থেকে কমিয়ে ১৬ বছর করে ভয়ংকর উদাহরণ তৈরি করেছিল। ফলে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে আমাদের দীর্ঘদিনের অর্জন টেকসই হয়নি। যেদেশে আইন করে যৌতুক ও বাল্যবিয়ে বন্ধ করা যায়নি, সেদেশে শুধু আইন দিয়ে শিশুশ্রম বন্ধ করা কঠিন।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, গণআন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী সরকার আর্থিক খাতসহ বিভিন্ন খাতে যে রকম লুটপাট করেছে তা আমদের সবার জানা। একইভাবে শিশুশ্রম নিরসনে বিগত সময়ে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সীমাহীন দুর্নীতি ও অনিয়মের ছাপ রেখে গেছে বিগত সরকার।
তিনি বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসনে বিগত আওয়ামী সরকার দুই দফায় বিভিন্ন প্রকল্পে যে ৩৫২ কোটি টাকা ব্যয় করেছে, ব্যাপক দুর্নীতির কারণে তার সুফল পাওয়া যায়নি। প্রকল্পের টাকা বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। সুবিধাবঞ্চিত শ্রমজীবী শিশু নির্বাচন, প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ও আয়বর্ধনমূলক কাজের জন্য নির্ধারিত টাকা প্রদানে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। তাই আমরা আশা করবো হাসিনা সরকার পালিয়ে যাবার পর ক্ষমতার পালা বদলে দুর্নীতির যেন পালাবদল না হয়। শিশুশ্রম নিরসনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের মাধ্যমে দেশি—বিদেশি অর্থ সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান ও আইএলও বাংলাদেশ অফিসের শ্রম প্রশাসন বিভাগের প্রধান নীরান রামজুঠান। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মমতাজ আহমেদ এবং মন্ত্রিপরষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) জাহেদা পারভীন।
এই ছায়া সংসদে বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের বিতার্কিকদের পরাজিত করে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকরা চ্যাম্পিয়া হয়।
প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন উপসচিব রোকেয়া পারভীন জুই, সিনিয়র সাংবাদিক মাঈনুল আলম, সাবেক বিতার্কিক ড. এস এম মোর্শেদ, চাইল্ড লেবার বিশেষজ্ঞ আফজাল কবির খান ও সাংবাদিক ইয়াসির আরাফাত রিপন। প্রতিযোগিতা শেষে চ্যাম্পিয়ন দলকে ৫০ হাজার ও রানারআপ দলকে ৩০ হাজার টাকাসহ ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র দেওয়া হয়।
- বিষয় :
- প্রতিযোগিতা
- শিশুশ্রম