প্রাণিজগৎ
সাগরতলের অন্ধকারে মিথেনখেকো মাকড়সা

যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূলের কাছে সাগরের তলদেশে পাওয়া সামুদ্রিক মাকড়সা - সিএনএন
সমকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২৫ | ০১:২৬ | আপডেট: ০১ জুলাই ২০২৫ | ১২:০১
মিথেন তাপ ধরে রাখা এমন এক গ্যাস, যা শুধু মানুষের জন্য নয়, বিপদের কারণ হতে পারে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের জন্যও। সাগরের গভীর অন্ধকার অংশে এই গ্রিনহাউস গ্যাসটি পৃথিবীর সবচেয়ে রহস্যময় কিছু প্রাণীর জন্য অবশ্য আশীর্বাদ। কারণ, এই মিথেন খেয়েই তারা জীবন বাঁচায়। সম্প্রতি সাগরতলের ঘন অন্ধকারে তেমনই এক রহস্যময় মাকড়সার (সি স্পাইডার) খোঁজ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এই প্রাণীটির অস্তিত্ব এর আগে ছিল অজানা।
জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূলের কাছে সাগরের তলদেশে তিনটি অজানা ও নামহীন সামুদ্রিক মাকড়সার প্রজাতি পাওয়া গেছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, অদ্ভুত এই মাকড়সাগুলো হয়তো সাগরের তলদেশ থেকে বেরিয়ে আসা গ্যাসের ওপর নির্ভর করে টিকে থাকে। এ ধরনের প্রাণীর এই দুর্লভ সামুদ্রিক আবাসস্থলকে বলা হয় ‘মিথেন সিপ’, যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে হাজার হাজার ফুট গভীরে অবস্থিত।
বিজ্ঞানীদের ধারণা, মিথেন সিপ অঞ্চলে ব্যাকটেরিয়া এবং এ ধরনের মাকড়সারা সম্ভবত বিচিত্র এক সহাবস্থান গড়ে তুলেছে। বেঁচে থাকার পারস্পরিক প্রক্রিয়ায় ব্যাকটেরিয়ারা মাকড়সাগুলোর বাইরের খোলসের ওপর তাদের বাসা গড়ে তোলে। বিনিময়ে এই অণুজীবেরা মিথেন ও অক্সিজেনকে রূপান্তর করে নিজেদের তৈরি করে কার্বনসমৃদ্ধ চিনি ও তৈলাক্ত পদার্থে। এটি খেয়েই বেঁচে থাকে অদ্ভুত মাকড়সারা।
গত ২৩ জুন প্রসিডিংস অব দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সে প্রকাশিত এক জার্নালে নতুন আবিষ্কৃত এই মাকড়সা নিয়ে গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। লস অ্যাঞ্জেলেসের অক্সিডেন্টাল কলেজের জীববিজ্ঞানের অধ্যাপক এবং এই গবেষণার প্রধান সানা গফ্রেডি বলেন, অদ্ভুত এই সামুদ্রিক মাকড়সাগুলোর শরীরে স্বাভাবিক শিকার বা আহারের অঙ্গ নেই। অন্য প্রজাতির সামুদ্রিক মাকড়সা যেখানে শিকার করে, সেখানে এরা নিজের শরীরকেই যেন চাষের জমি বানিয়ে নিয়েছে। যেন এক ধরনের স্বয়ংসম্পূর্ণ খামার। যেমন আপনি সকালের নাশতায় ডিম খান, ঠিক তেমনি সামুদ্রিক মাকড়সা তার শরীরের উপরিভাগে বাসা করা ব্যাকটেরিয়া খায়। সামুদ্রিক মাকড়সার ক্ষেত্রে এই অনন্য পুষ্টিকৌশল আগে কখনও দেখা যায়নি।
জানা গেছে, বিচিত্র এই মাকড়সার পুরুষরা হাঁটুর ভাঁজে ডিম আটকে রাখে। সে সময় তারা নিজের শরীরের ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে দেয় শিশু সন্তানের শরীরেও। এটি অনেকটা আমাদের শরীরের উপকারী ব্যাকটেরিয়ার মতো, যা জন্মের সময় মায়ের শরীর থেকে সন্তানের শরীরে যায়। গবেষকরা বলছেন, এটি মানুষের অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া উত্তরাধিকারের ধারণা বোঝার ক্ষেত্রেও বড় সূত্র হতে পারে।
গফ্রেডির মতে, এই মাকড়সা ও তাদের শরীরে থাকা ব্যাকটেরিয়াগুলো হয়তো গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ করে। তা হলো পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে পৌঁছাতে পারত এমন প্রাকৃতিক গ্যাস মিথেনকে তারা আটকে দেয়। এই মিথেনকেই বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ার জন্য দায়ী বলে মনে করা হয়। তিনি বলেন, গভীর সমুদ্র আমাদের থেকে অনেক দূরের জগৎ।
তবে সেখানে সব প্রাণ একে অপরের সঙ্গে যুক্ত। তারা আকারে ছোট হলেও এই প্রাণীগুলো সেই পরিবেশে বিশাল প্রভাব রাখছে। আমরা যদি মহাসাগর সম্পর্কে বোঝাপড়া না করি, তাহলে কখনোই এর টেকসই ব্যবহার অসম্ভব। খবর সিএনএনের।
- বিষয় :
- প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর
- সমুদ্র সৈকত