ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

উপকূলে সূর্যমুখী চাষ

উপকূলে সূর্যমুখী চাষ

ফাইল ছবি

রুবেল নাহিদ পি

প্রকাশ: ১৮ মে ২০২৪ | ০৮:৩৫ | আপডেট: ১৮ মে ২০২৪ | ১১:৪৯

রোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলায় মাঠগুলোতে দূর থেকে দেখলে মনে হবে, বিশাল আকারের হলুদগালিচা বিছিয়ে রাখা হয়েছে। কাছে গেলে চোখে পড়ে হাজারো সূর্যমুখী ফুল। বাতাসে দোল খেয়ে ফুলগুলো যেন আমন্ত্রণ জানাচ্ছে সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য।

উপজেলায় সূর্যমুখী চাষ করে কাঙ্ক্ষিত ফলন পেয়ে খুশি চাষিরা। উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় সূর্যমুখী চাষ করেছেন ৮৫০ জন কৃষক। কম সময় ও অর্থ ব্যয় করে সূর্যমুখী চাষ করে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় এতে আগ্রহী হচ্ছেন কৃষক।

কৃষি বিভাগের উৎসাহে সাধারণ কৃষকদের সূর্যমুখী চাষে উদ্বুদ্ধ করতে পরীক্ষামূলক মঠবাড়িয়া উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের ৪৭৭ হেক্টর জমিতে প্রথমবারের মতো চাষ হচ্ছে সূর্যমুখী ফুলের। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সার ও বীজে প্রণোদনা দিয়েছে।

আমড়াগাছিয়া ইউনিয়নের কালিকাবাড়ি গ্রামে ও উপজেলার বিভিন্ন সূর্যমুখী চাষ করা জমিতে গিয়ে দেখা যায়, ফুটে থাকা সূর্যমুখী ফুলের সমাহারে এক নয়নাভিরাম দৃশ্যের অবতারণা হয়েছে। চারদিকে হলুদ রঙের ফুলের মনমাতানো ঘ্রাণ আর মৌমাছিরা ছুটছেন এক ফুল থেকে অন্য ফুলে তাতে মুখরিত হয়ে উঠেছে কৃষকের জমি। এটি যেন ফসলি জমি নয়, এ এক দৃষ্টিনন্দন বাগান। তবে সূর্যমুখী ফুল চাষের লক্ষ্য নিছক বিনোদন নয়। মূলত ভোজ্যতেল উৎপাদনের মাধ্যমে খাদ্য চাহিদা মেটাতে এ চাষ করা হচ্ছে। তাই অন্যান্য ফসলের চেয়ে সূর্যমুখী চাষে বেশি লাভের প্রত্যাশা অনেক বেশি। সূর্যমুখী ফুলের চাষ করলে ফুল থেকে তেল, খৈল ও জ্বালানি পাওয়া যায়। প্রতি কেজি বীজ থেকে কমপক্ষে আধা লিটার তৈল উৎপাদন সম্ভব। প্রতি বিঘা জমিতে ৭ থেকে ১০ মণ বীজ উৎপাদন হয়। তেল উৎপাদন হবে প্রতি বিঘায় ১৪০ থেকে ২০০ লিটার পর্যন্ত। প্রতি লিটার তেলের সর্বনিম্ন বাজার মূল্য ২৫০ টাকা। প্রতি বিঘা জমিতে খরচ হয় সর্বোচ্চ সাড়ে ৩ হাজার টাকা। বর্তমানে বাজারে ভোজ্যতেলের আকাশছোঁয়া দাম হওয়ার কারণে চাহিদা বেড়েছে সরিষা ও সূর্যমুখী তেলের।

উপজেলার কৃষক  ফজলুল হক (৫৬) প্রায় ২০ শতাংশ জমিতে প্রথমবার সূর্যমুখী চাষ করেছেন। ভালো ফসলও হয়েছে। কিন্তু কপালে চিন্তার ভাঁজ তাঁরও। সূর্যমুখী ফুল পাকতে শুরু করেছে কিন্তু তাদের কোনো প্রস্তুতি নেই। তিনি বলেন, ‘কৃষি অফিস থেকে সুযোগ-সুবিধা পেলে আশা করছি লাভের মুখ দেখতে পারব। শুনেছি সূর্যমুখীর তেল স্বাদে, গুণে 
ভালো। দামও অনেক বেশি। তাই এ ফসল নষ্ট হতে দিতে চাই না।’

চৈত্র মাসে সূর্যমুখী ফুল সৌন্দর্যে মানুষের মনকে রাঙিয়ে তোলে। বৈশাখে কৃষকরা তা ঘরে তোলেন। সূর্যমুখী ফুল থেকে তেল, খৈল ও জ্বালানি পাওয়া যায়। প্রতি কেজি বীজ থেকে অন্তত আধালিটার তেল উৎপাদন সম্ভব।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আমড়াগাছিয়া ইউনিয়নের প্রবাস ফেরত আব্দুল আজিজ তাঁর বাড়ির পাশে ১৯ শতাংশ জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছেন। প্রবাসে থাকা অবস্থায় সূর্যমুখীর তেল খেতেন। সে আগ্রহ থেকে দেশে এসে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেন। এখন পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেন। 

মঠবাড়িয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান বলেন, ‘সূর্যমুখী এক দিকে মনোমুগ্ধকর ফুল; অন্যদিকে লাভজনক ফসল। কৃষকদের বিস্তারিত জানিয়ে সূর্যমুখী আবাদ করার পরিকল্পনা করি।’ সামান্য পরিমাণ রাসায়নিক সার ও দু’বার সেচ দিতে হয় এ ফসলে। তবে মিঠাপানির অভাবে কৃষকরা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রতি একর জমিতে ১৫-২০ হাজার টাকা খরচ হয়। এক একর জমির উৎপাদিত বীজ থেকে ৫০-৬০ হাজার টাকা লাভ করা সম্ভব। সূর্যমুখী গাছ জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা যায় বলে জানান এ কৃষি কর্মকর্তা।

প্রসঙ্গত, ১৯৭৫ সাল থেকে সূর্যমুখী একটি তেল ফসল হিসেবে বাংলাদেশে আবাদ হচ্ছে। ১০ থেকে ১৫ বছর আগে থেকে পিরোজপুর অঞ্চলে অল্প আকারে চাষাবাদ শুরু হয়। সূর্যমুখীর বীজ নানা ভিটামিনের গুণে সমৃদ্ধ। বিশেষ করে বি কমপ্লেক্স গ্রুপ এবং ভিটামিন সি, ই আছে এতে। এ ছাড়াও রয়েছে আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, জিঙ্ক, ম্যাঙ্গানিজ ইত্যাদি। 
এ অঞ্চলে সূর্যমুখীর ভালো ফলন পেতে উচ্চ ফলনশীল এবং স্বল্প জীবনকালসম্পন্ন আমন ধান একটু আগে লাগাতে ও কাটতে হয়। এরপর মাটিতে অতিরিক্ত আর্দ্রতা থাকা অবস্থায় বিনা চাষে সূর্যমুখী ও গমের বীজ বপন করে, সূর্যমুখীর চারা রোপণ করেও চাষ করা যায়। লবণাক্ততা তীব্র হওয়ার আগেই ফসল কাটার উপযোগী হয়।

কৃষি কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান জানান, সূর্যমুখী চাষের জন্য কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘কৃষকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দিয়ে সার, বীজ সরবরাহ করা হচ্ছে। এই অঞ্চলে সূর্যমুখীর আবাদ ভালো হলে কৃষিক্ষেত্রে তা নতুন দিগন্তের সূচনা করবে।’ 
 

আরও পড়ুন

×