ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

সালতামামি

আন্দোলনে মানসিক ট্রমা

আন্দোলনে মানসিক ট্রমা

গণঅভ্যুত্থানে জড়িত অনেকের দীর্ঘমেয়াদি মানসিক চিকিৎসা দরকার হতে পারে

সমকাল ডেস্ক

প্রকাশ: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২৩:০৬ | আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১২:৫৯

জুলাই মাসের ১৫ তারিখে তৎকালীন সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের হামলায় যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস রক্তাক্ত, রায়হানও তখন আহত হয়েছিলেন। দুই দিন পর ক্যাম্পাস বন্ধ করে তাদের হল থেকে বের হয়ে যেতে বাধ্য করা হয়। তবে তিনি ঢাকায় থেকে যান। বাড্ডাতে আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন। রায়হান জানান, ১৮ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত কোনো রাতেই দুশ্চিন্তায় ঘুম হয়নি। রায়হান ভেবেছিলেন আবারও ঠিকমতো ঘুমোতে পারবেন। কিন্তু চার মাস ধরে রাতে ঘুম ভেঙে যায়। পরিপূর্ণভাবে ঘুম আসে না। সবসময়ই কোনো একটা চিন্তা এসে ভর করে।

একই ধরনের অভিজ্ঞতা সামান্তার ক্ষেত্রেও। গণঅভ্যুত্থানের পর তিনি ভাবছিলেন পড়াশোনা, ক্লাস শুরু করে দিলেই দুশ্চিন্তা কেটে যাবে। তাঁকে অবাক করে দিয়ে প্রতিনিয়তই প্যানিক অ্যাটাক হতে থাকে। ক্লাসে প্রেজেন্টেশন দেওয়ার সময় কোনো কারণ ছাড়াই ভয় পেয়ে থেমে যান। মাঝে মাঝে ফোনের নোটিফিকেশনের রিং শুনে, বাবা-মায়ের ফোনের আওয়াজে, বন্ধুবান্ধব কেউ অসুস্থ হলেও ভীত হয়ে যান।

গণআন্দোলনে বহু মানুষ আহত হয়েছেন; জেল খেটেছেন বা কোনো না কোনো ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। বলার অপেক্ষা রাখে না, তাদের অনেকেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত অবস্থার মধ্য দিয়ে গেছেন, যা স্বল্পমেয়াদি থেকে দীর্ঘমেয়াদি মানসিক সমস্যা তৈরি করতে পারে। এর উল্লেখযোগ্যসংখ্যকই শিক্ষার্থী, শিশু-কিশোর। শারীরিক আঘাত চিকিৎসায় হয়তো দ্রুতই সেরে ওঠে; কিন্তু মানসিকভাবে যে ক্ষতিটা হয় তা দীর্ঘদিন থেকে যায় এবং এর প্রভাব অনেক সময় শারীরিক আঘাতের চেয়েও গভীর। অথচ এ নিয়ে এখনও সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক কামাল চৌধুরী বলেন, ‘‘গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী পরিস্থিতিতে আলোচনায় বিশেষ গুরুত্ব পায় মানসিক স্বাস্থ্যের অন্যতম ও জটিল একটি রোগ– পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার, যেটিকে সংক্ষেপে ‘পিটিএসডি’ বলা হয়। তীব্র শোক বা মানসিক আঘাত থেকে এ সমস্যা দেখা দেয়। এ কারণে অনেক সময়ই তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়, সামাজিক সম্পর্কের অবনতি ঘটে, পড়াশোনায় অমনোযোগিতা বা আগ্রহ হারিয়ে ফেলে, কর্মক্ষেত্রে কাজের পারফরম্যান্স খারাপ হয়ে যায়, এমনকি চাকরি বা ব্যবসা ছেড়ে দেওয়ার মতো কাজও করে ফেলে নিজেকে প্রতিরক্ষার জন্য। এর মাঝে অনেকেই কারণ থাকুক বা না থাকুক বিষণ্নতা বা অবসাদে ভুগতে পারেন, এমনকি আত্মহত্যার চিন্তাও শুরু করতে পারেন।’’

আরও পড়ুন

×