বিকল্প ব্যবস্থা খুঁজতে দরকার সংলাপ ও ঐকমত্য

ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি, জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান
প্রকাশ: ২৬ অক্টোবর ২০২৩ | ০০:৩৫ | আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০২৩ | ০০:৩৫
সংলাপের দরকার রয়েছে। সংলাপের মাধ্যমেই রাজনৈতিক মতানৈক্য শেষ করতে হবে। সংলাপের বিকল্প সংঘাত। কোনো রাজনৈতিক দল সংঘাত চায় না। দেশের জনগণও সংঘাত চায় না। যেখানেই যাই না কেন, সবাই একটি কথা জিজ্ঞাসা করে, সামনে কী হবে?
প্রথম প্রশ্ন থাকে নির্বাচন নিয়ে, এরপর জানতে চায় স্থিতিশীলতা থাকবে কিনা? আর সবশেষ জানতে চায়, অর্থনীতির অবস্থা কী হবে? সব বিবেচনায় সংলাপের দরকার রয়েছে, এর কোনো বিকল্প নেই।
বাংলাদেশে দুটি মতের চরম বিরোধী অবস্থান রয়েছে। আর এ পরিস্থিতিতেও সংবিধানের মধ্যেই সমাধানের পথ রয়েছে। সেখানে দেওয়া-নেওয়ার প্রশ্ন রয়েছে। সাংবিধানিকভাবেই সংকটের সমাধান করা যেতে পারে। এর সঙ্গে নির্বাচন কমিশন নিয়ে যদি কোনো সমস্যা থাকে, তারও পরিবর্তন করা যেতে পারে। সব শেষ কথা হলো, আমাদের একটি ঐকমত্যে আসতে হবে। আর আলোচনায় কখনোই শতভাগ ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব নয়। ফলে এখানে দেওয়া-নেওয়া এবং ছাড়ের মানসিকতার মধ্য দিয়ে যেতে হবে।
১৯৯০ সালের চেয়ে ১৯৮৮-তে বেশি আন্দোলন হয়েছে। কিন্তু ১৯৯০ সালে আমরা একটি ঐকমত্য দেখেছিলাম। যার কারণে আমরা ঠিক করেছিলাম, ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে নির্বাচন দেব। বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলো কেন ক্ষমতা ছাড়তে চায় না। কারণ হচ্ছে ‘ভয়’। ক্ষমতা ছেড়ে দিলে আমাকে সবকিছু নিয়ে দেশ থেকে চলে যেতে হবে। এখানে প্রতিহিংসার রাজনীতি চর্চা হয়। এ চর্চা ১৯৯০ সালে আমরা দেখেছি। আমাদের সব গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে জেলে নেওয়া হলো।
বর্তমানে সৎ ও গ্রহণযোগ্য মানুষ নির্বাচনে অংশ নিয়ে জিতে আসতে পারেন না। ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ যাবে, নাকি বিএনপি যাবে– তা নির্ধারণ করার জন্য আজকে বাংলাদেশে নির্বাচন হয়। আর এটিকেই গণতন্ত্র বলা হচ্ছে। গণতন্ত্র হচ্ছে মানুষের ইচ্ছার প্রতিফলন। বর্তমানে কি আমাদের সেই ব্যবস্থা রয়েছে, যেখানে মানুষের ইচ্ছার প্রতিফলন হয়? আজকে বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু করলেও এ ব্যবস্থা কি মানুষের গণতন্ত্রের অধিকার নিশ্চিত করতে পারবে?
আমাদের গণতন্ত্রের মৌলিক যে সমস্যাগুলো রয়েছে, তা আমরা সমাধান করতে পারিনি। বাংলাদেশের বর্তমান সংকট আওয়ামী লীগ বা বিএনপি বা জাতীয় পার্টিকে ক্ষমতায় নেওয়ার জন্য নয়। বর্তমান সংকট হচ্ছে, একটি অর্থবহ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের জন্য সঠিক প্রতিনিধিত্ব খুঁজে বের করা।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে জাতীয় ঐকমত্য। আর এই ঐকমত্যে আমাদের পৌঁছাতে হবে। আমি যদি প্রথমেই ধরে থাকি, তালগাছটি আমার হবে, তার পর যদি এর উত্তরগুলো বের করতে চাই– সেই উত্তর কোনো দিনই বের হবে না। তালগাছটি বাদ দিয়ে আলোচনায় যদি সঠিক সিদ্ধান্তের খোঁজে বসি, তাহলেই শুধু সমস্যার সমাধান হবে। আর এ জন্য সংলাপ এজেন্ডা হতে পারে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কীভাবে হতে পারে।
সবাই সবকিছু নিখুঁত চায়। সবকিছু নিখুঁত না হলে, গ্রহণ করব না– এটি হতে পারে না। কারণ নিখুঁত করা প্রায় অসম্ভব। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের প্রস্তাব ছিল, সংসদের প্রতিনিধি দলগুলো নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন। এটাই যে সমাধান, তা বলছি না। তবে এরও বিকল্প খুঁজে বের করা যায়। এর জন্য দরকার ঐকমত্য।