কটিয়াদীতে ৪০০ বছরের কুড়িখাই মেলা শুরু

কটিয়াদীতে কুড়িখাই মেলা। ছবি: সমকাল
কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ১১:৫৫ | আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ১১:৫৫
কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলায় শুরু হয়েছে ৪০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী কুড়িখাই মেলা। শাহ শামসুদ্দিন বুখারির (রহ.) মাজারের ওরসকে ঘিরে আয়োজন করা হয় এ মেলার। সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) শুরু হয়ে চলবে সপ্তাহব্যাপী। ধর্মীয় উৎসব হলেও এতে অংশ নেন সর্বস্তরের মানুষজন। মেলার অন্যতম আকর্ষণ হলো মাছের হাট। মাছ দিয়ে বরণ করা হয় নতুন জামাইদের।
জানা যায়, উপজেলার কুড়িখাই এলাকায় হযরত শাহজালাল (রহ.) এর বংশধর হযরত শাহ সামছুদ্দীন (রহ.) এর সমাধি সংলগ্ন এলাকায় প্রতি বছরের মাঘ মাসের শেষ সোমবার এ মেলার আয়োজন করা হয়। সপ্তাহব্যাপী চলা এ মেলা উপলক্ষে বিভিন্ন দোকানপাট বসেছে। কাঠের আসবাবপত্র, শিশুদের খেলনা, দৈনন্দিন পণ্যসামগ্রী, মেয়েদের সাজগোজের জিনিসপত্র পাওয়া যায় এ মেলায়। রয়েছে নানান স্বাদের খাবারের দোকানও। বিন্নি ধানের খই, কদমা, বাতাসা, গুড়, জিলাপির দোকান। মেলায় নানা বয়সের মানুষের বিনোদনের জন্য পুতুলনাচ, সার্কাস, মৃত্যুকূপ, নাগরদোলার আয়োজন করা হয়েছে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে এ মেলা।
মেলায় সবচেয়ে বড় আকর্ষণ মাছের হাট। মেলায় বিশাল এলাকাজুড়ে বসে মাছের হাট। এই হাটে বোয়াল, চিতল, আইড়, রুই, কাতল, সিলভার কার্পস, পাঙাস, মাগুর, বাঘাইরসহ নানা ধরনের অন্তত চার শতাধিক মাছের দোকান বসে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এই মেলা থেকে মাছ কিনতে আসেন ক্রেতারা। তবে দাওয়াতি জামাইরাই এসব মাছের মূলক্রেতা। মাছ বিক্রেতারা কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা সুনামগঞ্জের হাওর ও নদী থেকে মাছ সংগ্রহ করে মেলায় বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন।
মেলা উপলক্ষে আশপাশের পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে নতুন জামাই ও আত্মীয় স্বজনদের দাওয়াতের রীতি রয়েছে। এ উপলক্ষে নতুন জামাইদের বরণ করা হয়।
শাহ মোহাম্মদ মিরজাহান বলেন, নতুন জামাইদের মাছ নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে যাওয়ার রীতি রয়েছে এলাকায়। মেলার আশপাশের পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে এলাকায় জামাই ও আত্মীয়দের দাওয়াত দেওয়া হয়। আর মাছ দিয়েই জামাইদের বরণ করা হয়। তাছাড়া বউ মেলারও আয়োজন করা হয়। সেখানে এলাকার নারীরা আসেন। কেনাকাটা ও আনন্দ উৎসবে মেতে ওঠেন তারা।
এ দিকে বরাবরের মতো মেলায় সব কিছুর দাম একটু বেশি হয় বলে অভিযোগ আগত ক্রেতাদের। যদিও মেলা কমিটির সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূল্য স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করা হবে।
জিনিসপত্রের দাম বেশি হওয়ার বিষয়ে ব্যবসায়ীরা বলছেন, মেলায় জায়গা পেতে তাদের টাকা দিতে হয়, স্থান ভেদে সেই টাকার পরিমাণও বেশি হয়। ফলে এর প্রভাব পড়ে জিনিসের দামে।
এ বছর নিলামে মেলার ডাক ওঠে ১৩ লাখ ১০ হাজার টাকা। ডাক পেয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা জিল্লুর শাহ।
আর এই মেলা কমিটির সভাপতি কটিয়াদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খানজাদা শাহরিয়ার বিন মান্নান। মেলার সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যুগ যুগ ধরে মেলাটি ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। মেলার পরিবেশ ঠিক রাখতে যা যা করণীয় সবকিছু করা হবে। জিনিসপত্রের মূল্য স্বাভাবিক রাখতে বলা হয়েছে। বর্তমান বাজার মূল্যের চেয়ে যেন বেশি না হয় তা তদারকি করা হবে।’