ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

ছয় বছরের মেয়েকে মা সেজে অপহরণ করে ১৪ বছরের কিশোরী

ছয় বছরের মেয়েকে মা সেজে অপহরণ করে ১৪ বছরের কিশোরী

প্রতীকী ছবি

চট্টগ্রাম ব্যুরো

প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২৪ | ২২:১১ | আপডেট: ১২ জুলাই ২০২৪ | ২২:২০

ছয় বছরের মেয়ে শিশুটিকে লেগুনায় করে যখন ১৪ বছরের এক কিশোরী নিয়ে যাচ্ছিল, তখন মেয়েটি ঊচ্চ স্বরে কান্না করছিল। লেগুনার অন্য যাত্রীরা শিশুটির কান্নার কারণ জানতে চাইলে ওই কিশোরী নিজেকে মেয়ে শিশুটির মা বলে দাবি করে। এতে গাড়িতে থাকা রিয়াজ কবির নামে এক যাত্রীর বিষয়টি সন্দেহ হয়। সন্দেহ থেকে লেগুনাসহ ওই শিশু ও কিশোরীসহ নিয়ে যাওয়া হয় জেলার হাটহাজারী থানায়। সেখানে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে ভয়ঙ্কর তথ্য। আসলে সেই কিশোরী মেয়ে শিশুটির মা নন। মূলত শিশুটিকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।

বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) বিকেলে নগরীর অক্সিজেন-২ নম্বর গেট সড়কের বায়েজিদ বোস্তামী এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় শিশুটির বাবার দায়ের করা মামলায় চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তারা হলেন- সাইফুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর আলম, ১৪ ও ১৬ বছর বয়সী দুই কিশোরী। পুলিশ বলছে, দুই কিশোরী মাদকাসক্ত। 

পুলিশ জানায়, মাদকের টাকা যোগাড় করতেই শিশুটিকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। এই ঘটনায় আরও লোকজন জড়িত থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদেরও। 

পুলিশ আরও জানায়, শিশুটির বাড়ি হাটহাজারী থানার এগারোমাইল এলাকায়। ঘটনায় শিকার শিশুটির বাবা পেশায় সিএনজি অটোরিকশাচালক গত বুধবার বিকেলে বাড়ির সামনে খেলছিল সে। এ সময় তাকে বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে অপহরণ করে ১৪ বছরের ওই কিশোরী। এরপর হাটহাজারী থেকে এনে শিশুটিকে নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী এলাকায় ১৬ বছর বয়সী আরেক কিশোরীর বাসায় রাখা হয়। সেখান থেকে গতকাল বিকেলে লেগুনায় করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল অন্য স্থানে। মেয়েটিকে না পেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তার বাবা।

লেগুনাযাত্রী রিয়াজ কবির চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্প্রতি অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর পাস করেন। তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, অক্সিজেন থেকে ছেড়ে আসা লেগুনাটি বায়েজিদ বোস্তামীর মাজারের গেটে গেলে সেখান থেকে এক শিশুকে নিয়ে ওঠে এক কিশোরী। লেগুনাটি কিছু দূর যাওয়ার পর শিশুটি কান্না করতে থাকে। কারণ জানতে চাইলে মা পরিচয় দিয়ে কিশোরী বলে, পুতুলের জন্য কাঁদছে সে। কিশোরী বয়সে ছয় বছরের শিশুর মা- বিষয়টি নিয়ে তার মধ্যে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে যাত্রী রিয়াজ কবির তাঁর মুঠোফোনে কল করে তার বন্ধু মো. নোমানকে বায়েজিদ বোস্তামী থানার সামনে আসতে বলেন। 

এরমধ্যেই রিয়াজ লেগুনাটি বায়েজিদ বোস্তামী থানায় নিয়ে যেতে বলেন। লেগুনায় থাকা আরও কয়েকজন যাত্রী বিষয়টি বুঝতে পেরে তাঁরা বায়েজিদ থানায় ঢোকার আগে নেমে যান। শিক্ষিকা ওই কিশোরীকে ধরে রাখেন, যাতে লেগুনা থেকে নামতে না পারে।

রিয়াজ কবির জানিয়েছেন, বায়েজিদ বোস্তামী থানায় যাওয়ার পর ওই কিশোরী সব ঘটনা খুলে বলে। শিশুটিকে অপহরণ করার কথা স্বীকার করে। একপর্যায়ে পুলিশ শিশুটির সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হয়, তাকে অপহরণ করা হয়েছে। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে কিশোরীর সহযোগী ১৬ বছরের আরেক কিশোরী এবং সাইফুল ইসলাম (৩১) ও জাহাঙ্গীর আলম (৪০) নামের দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে হাটহাজারী থানায় নিয়ে যায়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হাটহাজারী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জালাল উদ্দিন সমকালকে জানিয়েছেন, শিশুটি অপহরণের ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ শুক্রবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাদের রিমান্ডে এনে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

আরও পড়ুন

×