তথ্য অধিকার দিবস কাল
অনিয়ম প্রকাশের ভয়ে তথ্য দিতে গড়িমসি দপ্তরপ্রধানদের

ফাইল ছবি
সৌমিত্র শীল চন্দন, রাজবাড়ী
প্রকাশ: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২০:০৮
বালিয়াকান্দি উপজেলার মেহেদী হাসান মাসুদ একটি জাতীয় দৈনিকের স্থানীয় প্রতিনিধি। কিছু দিন আগে পেশাগত কাজে তথ্য চেয়েছিলেন একটি দপ্তরে। প্রথমে তাঁকে মোবাইল ফোনে হুমকি দেওয়া হয়। পরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে অভিযোগ দেওয়া হয়। তথ্য চেয়ে না পাওয়ার এ রকম উদাহরণও কম নয়। জেলার কয়েকটি সরকারি দপ্তরে এখনও তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা হিসেবে কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক দপ্তরের কর্মকর্তা জানান, অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য ফাঁস হওয়ার ভয়ে দপ্তরের প্রধানরা তথ্য দিতে গড়িমসি করে থাকেন। তবে যে কোনো দপ্তরের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে তথ্য দেওয়া উচিত বলে জানান তারা।
মেহেদী হাসান মাসুদ বলেন, চলতি বছরে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, স্থানীয় সরকার বিভাগ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, নির্বাচন কমিশন, তথ্য কমিশনসহ ২০টি দপ্তরে আবেদন করেন। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, রাজবাড়ী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর, তথ্য কমিশনসহ পাঁচটি দপ্তর দেরিতে হলেও তথ্য সরবরাহ করেছে। বাকি ১৫টি আবেদনের প্রাপ্তি স্বীকার মেলেনি। সময়ক্ষেপণ করে তথ্য সরবরাহ করা হবে বলে ফোনে জানিয়েছে পাঁচটি দপ্তর।
মেহেদী হাসান আরও জানান, মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে ফটোকপিয়ার-সংক্রান্ত তথ্যের জন্য তিনবার আবেদন করেন। প্রথমবার তথ্য সরবরাহ করা হবে বলে চিঠি দিলেও আর দেয়নি। নতুন করে আবেদন করলে বলা হয়, এ-সংক্রান্ত তথ্য দপ্তরটিতে নেই। ২০ দিন আপিল করে জবাব পাননি। তথ্য কমিশনে অভিযোগ করলে শুনানি হয়। শুনানিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তথ্য সরবরাহ করেছেন জানিয়ে কিছুক্ষণ পর একটি মেইল পাঠান। বলা হয় তথ্য নেই দপ্তরটিতে। একই অভিযোগ পরে তথ্য কমিশন অস্পষ্ট প্রশ্ন আবেদন বলে নিষ্পত্তি করেছে। আপ্যায়ন খাতের তথ্য চেয়ে পাঁচটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আবেদন করেন। রাজবাড়ী, ফরিদপুর, মাগুরা তথ্য সরবরাহ করলেও অন্য দুটি কার্যালয় তথ্য দেয়নি।
রাজবাড়ী প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক সুমন বিশ্বাস জানান, পেশাগত কারণে মাঝেমধ্যেই তথ্য প্রয়োজন হয়। তথ্য চাইতে গেলে দপ্তরগুলো গড়িমসি করে। এখন পর্যন্ত জেলা প্রশাসক ও সিভিল সার্জন কার্যালয়ে আবেদন করে ঠিকভাবে তথ্য পেয়েছেন। সদর হাসপাতালে আবেদন করে তথ্য পাননি।
এ বিষয়ে সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. এসএমএ হান্নান জানান, আরএমওকে তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তিনি বদলি হয়েছেন। এর পর কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। একজন তার কাছে তথ্য চেয়ে আবেদন করলে উপজেলায় চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু সেখান থেকে উত্তর না আসায় তথ্য দেওয়া যায়নি।
জেলা প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক শামীম রেজা গত ৩০ জানুয়ারি এলজিইডিতে তথ্য চেয়ে আবেদন করেছিলেন। নির্ধারিত সময় পার হলেও জবাব পাননি। অফিসে গেলে মৌখিকভাবে কিছু তথ্য দিতে চেয়েছিলেন; কিন্তু তিনি রাজি হননি। তবে এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী ইউসুফ হোসেন জানান, তথ্য লাগলে দেওয়া হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওয়েব পোর্টালে জেলায় ৬৬টি সরকারি অফিসের তথ্য রয়েছে। এর মধ্যে সদর হাসপাতাল, জেলা কারাগার, কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয়, জেলা হিসাবরক্ষণ অফিসসহ ১০টিতে তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তার নাম দেওয়া রয়েছে। এসব দপ্তরে তথ্য চেয়ে না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন অনেকেই।
তথ্য কমিশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা লিটন কুমার প্রামাণিক বলেন, আবেদন করে নির্ধারিত সময়ে তথ্য না পেলে আপিল করতে হবে। সেখানেও না পেলে তথ্য কমিশনে আপিল করা যাবে। কোনো অফিসে তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা না থাকলে অফিসপ্রধান বরাবর আবেদন করা যাবে। তথ্য অধিকার আইন আরও সহজ করতে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
এমআরডিআইয়ের নির্বাহী পরিচালক হাসিবুর রহমান মুকুর বলেন, সাধারণ মানুষ যত বেশি এ আইন সম্পর্কে জানবে, দপ্তরগুলো তত জবাবদিহির আওতায় আসবে। এ আইন নিয়ে প্রচার-প্রচারণা নেই। তাই সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।
- বিষয় :
- অনিয়মের অভিযোগ
- রাজবাড়ী