আশুগঞ্জ-পলাশ সবুজ প্রকল্প
ইরি-বোরো মৌসুমের শুরুতেই সেচের পানি দাবি কৃষকদের

জনমত যাচাই ও গণশুনানিতে উপস্থিত ব্যক্তিবর্গ। ছবি: সমকাল
আশুগঞ্জ (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৪ মে ২০২৫ | ২১:২২
প্রস্তাবিত ‘আশুগঞ্জ-পলাশ সবুজ প্রকল্প’ বাস্তবায়নে পরিবেশগত ও আর্থ-সামাজিক প্রভাব নিরূপণ সমীক্ষার ওপর জনমত যাচাই ও গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে আগামী ইরি-বোরো মৌসুমের শুরুতে যেকোনভাবে সেচের পানি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন কৃষক ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
কৃষকেরা জানান, তারা গত ৪-৫ বছর কম খরচে ও সুবিধাজনক সেচের পানি না পাওয়ায় তাদের কৃষি জমি মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। এতে উৎপাদন নেমেছে অর্ধেকের কমে, সেচ খরচ বেড়েছে কয়েকগুণ।
তারা অভিযোগ করেন, কৃষি বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসন কৃষকদের সঙ্গে লুকোচুরি খেলছেন। তাদের ধোঁকা দিয়েছেন।
বুধবার দুপুরে বিএডিসির আশুগঞ্জস্থ নিজস্ব কার্যালয়ে পুরনো প্রকল্পের মেয়াদ শেষে নতুন প্রকল্প হাতে নিতে পরিবেশ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (সিইআইএস) এবং বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) এ গণশুনানির আয়োজন করে।
জানা গেছে, ‘আশুগঞ্জ পলাশ এগ্রো-ইরিগেশন সেচ প্রকল্প’টি দেশের একটি জ্বালানি সাশ্রয়ী পরিবেশবান্ধব ও ব্যতিক্রমী সেচ প্রকল্প। গত ৩০ জুন/২০২০ প্রকল্পের পঞ্চম পর্যায়ের মেয়াদ শেষ হয় এবং আশুগঞ্জ আখাউড়া মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে বিদ্যমান প্রকল্পের অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে গত ৫ বছর ধরে প্রায় বন্ধ সেচ ব্যবস্থাপনা। এ অবস্থায় দেশের জ্বালানি সাশ্রয়ী, পরিবেশবান্ধব ও কম খরচের প্রকল্পের আওতায় ১৫ হাজার হেক্টর জমির ইরি-বোরোর আবাদ ব্যাহত হচ্ছে। সেচ খরচ বৃদ্ধিতে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে প্রকল্পের ৩৪ হাজার কৃষক, প্রতি মৌসুমে ব্যাহত হচ্ছে ধানের অন্তত ৭০ হাজার টন ধান উৎপাদন।
কৃষকরা জানান, সেচের সুবিধা না পাওয়ায় যে জমিতে ২০-২৫ মণ ধান উৎপাদন হতো সেখানে হয় ৭-৮ মণ। শুধু তাই নয়, প্রকল্পের সেচ চালু থাকলে বিঘা প্রতি গড়ে হাজার টাকা সেচ খরচ হলেও এখন হচ্ছে ৬-৭ হাজার টাকা। কৃষক ও কৃষির স্বার্থে তারা দ্রুত সেচ সুবিধা চালুর দাবি জানান।
বিএডিসি সূত্র জানিয়েছে, কৃষকের দাবির প্রেক্ষিতে কৃষি ও কৃষকের স্বার্থে পরিকল্পনা কমিশনে নতুন প্রস্তাবনা জমা দেয় বিএডিসি। গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক কমিটি (একনেক) সভায় ৪৬৭ কোটি টাকার নতুন প্রকল্প অনুমোদন দেয়। অনুমোদিত প্রকল্পটি পরিবেশ সম্মত কিনা তা যাচাইয়ে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
গণশুনানিতে উন্মুক্ত আলোচনায় বক্তব্য রাখেন সেচ সুবিধাভোগী কৃষক আশুগঞ্জের মো. সুলায়মান মিয়া, হুমায়ুন মিয়া, তফছির মিয়া, আবু তালেব ও সরাইল উপজেলার আবতাব মিয়া, সিদ্দিক মিয়া, আব্দুল বাছেতসহ বেশ কয়েকজন। তারা নিজেরদের বোকা ও প্রশাসন তাদের ধোঁকা দিচ্ছেন উল্লেখ করে অভিযোগ করেন, গত ৪-৫ বছর ধরে বিএডিসি ও উপজেলা প্রশাসন সেচ চালু হচ্ছে বলে বললেও তা হচ্ছে না। সেচ না পাওয়ায় তাদের জমি মরুভূমি হয়ে যাচ্ছে।
তারা বলেন, ‘আপনাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলতে থাক, আমাদের সেচের পানি দেন।’
কৃষকের দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি হাজী শাহজাহান সিরাজ ও কেন্দ্রীয় কৃষক সমবায় সমিতির সভাপতি মো. শামীম। উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাফে মোহাম্মদ ছড়াসহ উপস্থিত সবাই কৃষি ও কৃষকের স্বার্থে দ্রুত প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা কামনা করেন।
আশুগঞ্জে উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাফে মোহাম্মদ ছড়ার সভাপতিত্বে গণশুনানি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএডিসির উপ-প্রধান প্রকৌশলী ও প্রকল্পের ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা মো. ওবায়েদ হোসেন, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কাজী তাহমিনা শারমিন, আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. শাহজাহান সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক বদরুন্নাহার সীমা, বিএডিসির নির্বাহী প্রকৌশলী রনি সাহা, সিইআইএসের পরিচালক কাজী কামরুল হাসান, একই প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন বিশেষজ্ঞ এইচএম নুরুল ইসলাম, সেচ বিশেষজ্ঞ মো. ফেরদৌসুর রহমান প্রমুখ।
উল্লেখ, আশুগঞ্জ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিভিন্ন ইউনিটের টারবাইন ঠান্ডা রাখতে মেঘনা নদী থেকে যে বিপুল পরিমাণ পানি উঠানো হয়, তা ব্যবহারের পর বর্জ্য হিসাবে একটি আউটার চ্যানেল দিয়ে পুনরায় নদীতেই ফেলে দেওয়া হয়। ১৯৭৫ সালে এলাকার কিছু ব্যক্তির প্রচেষ্টায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অভ্যন্তরে একটি হেড রেগুলেটর নির্মাণের মাধ্যমে এ পানির গতিপথ আংশিক পরিবর্তন করে পার্শ্ববর্তী জমিতে সেচ কাজে ব্যবহার করা হয়। ফলে উৎপাদনে ব্যাপক সফলতা আসলে স্থানীয় কৃষকদের মাঝে উৎসাহের সঞ্চার হয়, দৃষ্টিগোচর হয় সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগেরও। পরবর্তীতে সরকার ১৯৭৮-৭৯ অর্থবছরে বিএডিসির আওতায় ‘আশুগঞ্জ সবুজ প্রকল্প’ নামে একটি সেচ প্রকল্প গ্রহণ করে। এদিকে একই সময় নরসিংদীর পলাশ উপজেলায়ও অনুরূপ একটি প্রকল্প গড়ে উঠায় প্রকল্প দুটিকে একীভূত করে ১৯৯০-৯৫ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় যাত্রা শুরু করে ‘আশুগঞ্জ-পলাশ এগ্রো ইরিগ্রেশন সেচ প্রকল্প’।
- বিষয় :
- আশুগঞ্জ
- ব্রাহ্মণবাড়িয়া
- সেচপাম্প
- সেচ পদ্ধতি
- কৃষক