ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে বিচারের হুমকি, বোয়ালমারীর ইউএনওকে ভর্ৎসনা

সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২১ জুন ২০২২ | ১০:৫৯ | আপডেট: ২১ জুন ২০২২ | ১০:৫৯
আদালতের জারিকারকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার এবং ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে বিচারের হুমকি দেওয়ার ঘটনায় ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রেজাউল করিমকে ভর্ৎসনা করেছেন হাইকোর্ট।
মঙ্গলবার বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ বলেন, 'আপনি একটি পক্ষ নিয়ে যে আচরণ করেছেন, তা সভ্য রাষ্ট্রের জন্য একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় হয়ে থাকবে।'
এর আগে শুনানির শুরুতে ইউএনও রেজাউল করিম ও নাজির উকিল মিয়া ভুল স্বীকার করে আদালতের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন। ওই সময় আদালত বলেন, 'আপনাকে ক্ষমা করলে আমরা আটকে যাব। আদালত সবার ওপরে। আপনি আদালতের আদেশ মানেননি। আদালতের সমন নিয়ে নোটিশ জারিকারকরা আপনাদের কাছে গিয়েছিল। অথচ কী দুর্ব্যবহার না করলেন! আপনি যে আচরণ করলেন, তা সভ্য রাষ্ট্রের কলঙ্ক লেগে গেল। আপনি একটা ছোট বিষয় হ্যান্ডেল করতে পারেন না। কীভাবে জনসেবা করবেন? একটি কথা মনে রাখবেন, আইন আদালত আছে বলেই আপনি সম্মান পান। আপনি যদি আইন না মানেন, আপনাকে কেউ মানবে না।'
আদালত আরও বলেন, ‘জারিকারকের সঙ্গে আপনাদের দুর্ব্যবহারের ঘটনা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এসেছে। সাধারণ মানুষ কী ভাবছে জানেন? বিচার বিভাগ আর নির্বাহী বিভাগের মধ্যে মারামারি লেগে গেছে। এটা শোভনীয় নয়।’
নাজির উকিল মিয়ার উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘আপনি মূল অপরাধী। আপনি সিনক্রিয়েট করেছেন। খুব খারাপভাবে মিসগাইড করেছেন।’
শুনানির শেষ পর্যায়ে আদালত ইউএনওকে বলেন, ‘ভবিষ্যতে এ ধরনের আচরণ করবেন না। আপনার দায়িত্ব-কর্তব্যের প্রতি নজর রাখবেন। আদালতকে সম্মান না করলে আপনি কখনও সম্মান পাবেন না।’ পরে আদালত তাঁদের ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেন। আর তাঁদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুলের আদেশের জন্য আগামী রোববার দিন দেন। আদালতে ইউএনও-নাজিরের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ও ব্যারিস্টার মাহবুব শফিক। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।
ফরিদপুরের বোয়ালমারী আদালতে 'ছরোয়ার শেখ বনাম নির্বাহী প্রকৌশলী, সওজ' মামলায় নোটিশ জারির জন্য গত ২৭ এপ্রিল জারিকারক কামাল হোসেন ও মেহেদী হাসান উপজেলা ইউএনও কার্যালয়ে গিয়েছিলেন। নাজির উকিল মিয়াকে তাঁরা নোটিশ গ্রহণের অনুরোধ করেন। তবে ব্যস্ততার অজুহাত দেখিয়ে তাঁদের অপেক্ষায় রাখেন উকিল মিয়া। বিকেলে ফের নাজিরের কাছে গেলে তাঁদের ওপরতলায় গিয়ে বসতে বলেন। সময়ক্ষেপণ ও নানা টালবাহানার একপর্যায়ে জারিকারকরা বিষয়টি আদালতকে জানানো হবে বলে জানান। তখন নাজির তাঁদের সঙ্গে বাজে ব্যবহার করেন।
বিষয়টি ইউএনওকে জানালে তিনি জারিকারকদের কক্ষে ডেকে নিয়ে দরজা আটকে খারাপ ব্যবহারের অভিযোগ তুলে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে তাঁদের সাজা দেওয়ার হুমকি দেন। সন্ধ্যার দিকে তাঁদের পা ধরে মাপ চাইতে বাধ্য করেন ইউএনও এবং মুচলেখা নিয়ে ছেড়ে দেন।
বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে এলে গত ৭ জুন ইউএনও রেজাউল ও নাজির উকিল মিয়াকে স্বপ্রণোদিত হয়ে তলব করা হয়। তাঁদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে তা জানতে চেয়েও রুল জারি করেন আদালত।
- বিষয় :
- বোয়ালমারী
- রেজাউল করিম
- ইউএনও
- রাজিক আল জলিল