ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ

সাইকেল কেনার টাকা না পেয়ে খালার মানিব্যাগ থেকে চুরি, দেখে ফেলায় হত্যা

সাইকেল কেনার টাকা না পেয়ে খালার মানিব্যাগ থেকে চুরি, দেখে ফেলায় হত্যা

নিহত মরিয়ম বেগম (৬০) ও তার ছোট বোন সুফিয়া বেগম (৫২)

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ মে ২০২৫ | ১৭:১৬ | আপডেট: ১২ মে ২০২৫ | ১৯:১১

রাজধানীর শেওড়াপাড়ায় দুই বোনকে হত্যার ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজে দেখতে পাওয়া তরুণকে (১৪) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার তরুণ নিহত দুইবোনের ছোট বোনের ছেলে। আজ সোমবার ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ জানায়, গত শুক্রবার (৯ মে) দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটের পর রাজধানীর শেওড়াপাড়ার ভাড়া বাসায় খুন হন মরিয়ম বেগম ও তার বোন সুফিয়া বেগম। ওই ঘটনায় মরিয়ম বেগমের মেয়ে বাদী হয়ে মিরপুর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

ডিবি-মিরপুর বিভাগ জানায়, পুরোনো বাইসাইকেল কিনতে ৩ হাজার টাকা দরকার ছিল ওই তরুণের। এজন্য সে খালার বাসায় টাকা চাইতে যায়। খালা রাজি না হওয়ায় সে মানিব্যাগ থেকে চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে। খালা তার মাকে বলে দেবেন বলে ভয় দেখান। তখন তাকে ছুরিকাঘাত এবং পরে অন্য খালাকে ছুরিকাহত করে সে।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ আরও জানায়, নিহতদের আপন ভাগনে (১৪) গত ৯ মে দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটের সময় শেওড়াপাড়ায় তার বড় খালা মরিয়ম বেগমের বাসায় যায়। তার বড় খালা (মরিয়ম বেগম) তাকে আপ্যায়ন করার কাজে ব্যস্ত থাকেন এবং সেজো খালা (সুফিয়া বেগম) প্লেট-বাটি ধোয়ামোছা করে বারান্দার দিকে যান। এ সুযোগে সে বড় খালার রুমে টিভির পাশে রাখা মানিব্যাগ থেকে পুরাতন সাইকেল কেনার জন্য তিন হাজার টাকা চুরি করে। চুরির ঘটনা ধরা পড়লে বড় খালা মরিয়ম তাকে বকাবকি করেন এবং তার মাকে জানানোর কথা বলেন। তিনি তার মাকে ফোন করার জন্য মোবাইল ফোন খুঁজতে থাকেন। সে মুহূর্তে ওই তরুণ ডাইনিং টেবিলে থাকা লেবু কাটার ছুরি দিয়ে প্রথমে বড় খালার পেটে আঘাত করে। আঘাত পেয়ে মরিয়ম বেগম রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে মারতে উদ্যত হলে সে পুনরায় আঘাত করে। তার বড় খালার চিৎকার শুনে সেজো খালা (সুফিয়া বেগম) পাশের রুম হতে এসে তাকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে তাকেও একই চাকু দিয়ে পেটে একবার আঘাত করলে তিনি মেঝেতে পড়ে যান।

পুলিশ আরও জানায়, এরপর অভিযুক্ত তাজ রান্নাঘর থেকে শিলপাটা এনে তার বড় খালা ও সেজো খালার মাথায় কয়েকবার আঘাত করে। তারপর সে টয়লেটে গিয়ে তার হাতে ও মুখে লেগে থাকা রক্ত পানি দিয়ে পরিষ্কার করে। এরপর পাশের রুমে গিয়ে তার রক্তমাখা টি-শার্ট ও জিন্স প্যান্ট পাল্টে খালাতো বোন মিষ্টির ব্যবহৃত একটি জিন্স প্যান্ট ও তার ব্যাগে থাকা আরেকটি রঙিন টি-শার্ট ও ক্যাপ পরে নেয়। পরে সে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে চাবি নিয়ে একটি সিএনজি করে শনির আখড়ার উদ্দেশে রওয়ানা করে।

ডিবি-মিরপুর বিভাগ সূত্রে আরও জানা যায়, মামলা রুজুর পর গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণ, নিবিড় তদন্ত ও প্রযুক্তির সহায়তায় মামলার ঘটনায় জড়িত তরুণের (১৪) অবস্থান শনাক্ত করে রোববার (১১ মে) ভোর আনুমানিক সাড়ে ৩টায় ঝালকাঠি জেলার সদর এলাকায় তার নানা বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করে তাকে গ্রেপ্তা‌র করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রক্তমাখা কাপড়, জুতা এবং অন্যান্য আলামত উদ্ধার করা হয়, যার মধ্যে রয়েছে রক্তমাখা নীল রঙের টি-শার্ট, রক্ত মাখা দুটি জিন্স প্যান্ট (এর মধ্যে একটি তার ও একটি তার খালাতো বোন মিষ্টির)। 

গ্রেপ্তা‌র তরুণকে আজ সোমবার আদালতে পাঠানো হলে সে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।

আরও পড়ুন

×