ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

সমসাময়িক

‘সংঘবদ্ধ ধর্ষণ আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে’

‘সংঘবদ্ধ ধর্ষণ আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে’

জেড আই খান পান্না

জেড আই খান পান্না, চেয়ারপারসন, আইন ও সালিশ কেন্দ্র

প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৪ | ২৩:৪৯ | আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২৪ | ১৪:০২

গত ২৮ জুন রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকায় স্বামীর সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে এক নারী সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে খিলক্ষেত থানা পুলিশ। ওই নারীকে তখনই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করা হয়।

পুলিশ জানায়, সন্ধ্যার দিকে ওই নারী তাঁর স্বামী ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বনরূপা এলাকায় গেলে সেখানে আবুল কাশেম ওরফে সুমন নামের এক ব্যক্তির নেতৃত্বে সাতজনের দল তাদের অপহরণ করে। পরে স্বামীর কাছে ৭০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করে তারা। মুক্তিপণের টাকা আনার জন্য ছেড়ে দিলে তিনি বেরিয়ে এসে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন দেন। পুলিশ ওই এলাকায় অভিযান চালিয়ে ওই নারীকে উদ্ধার করে।

পরদিন শনিবার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে প্রধান আসামি কাশেমসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে কাশেম জানান, ওই নারীর সঙ্গে তাঁর প্রেমের সম্পর্ক ছিল; তাঁকে বিয়ে না করায় পরিকল্পিতভাবে দলবল নিয়ে ওই নারীকে তুলে এনে ধর্ষণ করা হয়েছে।

-----------------------------------------------------------------------------------

ধর্ষণ বা সংঘবদ্ধ ধর্ষণ নিয়ন্ত্রণ না করতে পারাটা আসলে আমাদের আইন এবং বিচারব্যবস্থার দুর্বলতা। আইন ও বিচারব্যবস্থা যদি দ্রুত এটার সমাধান করত, তাহলে এমন অপরাধ করার আগে অনেকেই দশবার ভাবত। এমন অপরাধের শাস্তি আরও বেশি হওয়া দরকার।

শুধু ধর্ষণ নয়, এ সময় আমরা দেখছি অন্য সব অপরাধই বাড়ছে। বিচারব্যবস্থা দ্রুত করলেই যে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে তা নয়। গোটা ব্যবস্থাটার মধ্যেই তো ঝামেলা– সঠিক বিচার, ন্যায় বিচার করতে হবে। সে জায়গায় আইনেরও ব্যত্যয় আছে। আবার মেডিকেল রিপোর্ট, ফরেনসিক রিপোর্ট, ডিএনএ রিপোর্ট–এগুলো হতে অনেক সময় লাগায়; অথচ এত সময় লাগার কথা নয়। আরেকটা বিষয় হলো, ধর্ষণ আর ঘুষ এ দুটোর বেলায় সাক্ষী থাকে না। সেই ক্ষেত্রে আদালতের ওই বিবেচনাটুকু থাকতে হবে।

নারী নির্যাতন, ধর্ষণের বিরুদ্ধে টেলিভিশনে সচেতনতামূলক প্রচারণা থাকা উচিত। কিছু কিছু আছে। তবে যে পরিমাণে সচেতনতামূলক প্রচারণা থাকার কথা, তা নেই। গণসচেতনতামূলক প্রচারণা অনলাইন-অফলাইন সব মাধ্যমে বাড়াতে হবে। আমাদের সামাজিক সচেতনতাও কম। সামাজিকভাবে ধর্ষককে যতটা দোষী মনে করা হয়, তার চেয়ে ধর্ষণের শিকার মানুষটিকে বেশি অপরাধী মনে করা হয়। 

আইন ও বিচারের ক্ষেত্রে দুর্বলতা, দীর্ঘসূত্রতা এবং গণসচেতনতার দুর্বলতা নারীর প্রতি সহিংসতা, ধর্ষণ, বাল্যবিয়ে বাড়াচ্ছে। এগুলো শুধু অপরাধ নয়; এখানে মানবিকতা বিদ্ধ হয়। কোনো সভ্য সমাজে এমন নিয়ন্ত্রণহীন নারী নির্যাতন চলতে পারে না।

যদি সম্ভ্রান্ত পরিবারের কারও সঙ্গে এমন অপরাধ হতো, ওই নারী যদি কোনো নামিদামি মানুষের স্ত্রী হতেন, তাহলে এখন তোলপাড় হয়ে যেত। ধর্ষকও যদি শক্তিশালী না হয়, তখন তাঁর বিচার হয়। ধর্ষক বড় কেউ হলে সে মামলা প্রায়ই আলোর মুখ দেখে না। এখানে ধর্ষক ও ধর্ষণের শিকার ব্যক্তির শ্রেণিগত অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ।
 

আরও পড়ুন

×