গঙ্গা স্নানের মধ্য দিয়ে কুয়াকাটায় শেষ হলো রাসলীলা

গঙ্গাস্নান বা পুণ্যস্নানের মধ্য দিয়ে পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় শেষ হয়েছে রাস উৎসবের মূল আনুষ্ঠানিকতা। ছবি: সমকাল
কুয়াকাটা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর ২০২৪ | ১১:৫৬
গঙ্গাস্নান বা পুণ্যস্নানের মধ্য দিয়ে পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় শেষ হয়েছে রাস উৎসবের মূল আনুষ্ঠানিকতা। শুক্রবার ভোর ৬টায় জাগতিক সকল পাপ মোচনের আশায় সৈকতের নোনা জলে গাঁ ভাসিয়ে এ গঙ্গাস্নান সম্পন্ন করেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
স্নানের আগে সৈকতে মোমবাতি, আগরবাতি, বেলপাতা, ফুল, ধান, দূর্বা, হরিতকী, ডাব, কলা, তেল ও সিঁদুর সমুদ্রে জলে অর্পণ করে সনাতনী নারীরা। এ সময় উলুধ্বনি ও মন্ত্রপাঠে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো সৈকত। এছাড়া মাথা-ন্যাড়াসহ প্রায়শ্চিত্ত ও পিণ্ডদান করেন অনেক মানতকারীরা। এর আগে রাতভর কুয়াকাটা শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণ মন্দিরে পূজার্চনা, সঙ্গীতানুষ্ঠান ও মহানাম কীর্তনে মেতে ওঠে সনাতনীরা।
পটুয়াখালী থেকে আগত শ্রী রবীন বলেন, আমাদের বিশ্বাস যেই এই দিনে সকল পাপমোচনের মুহূর্ত। তাই আমরা গতকালকে কুয়াকাটা এসেছি। রাতভর ভগবানের গুণকীর্তন শেষ করে সকালে সমুদ্র স্নানের মধ্যে দিয়ে সৃষ্টিকর্তার কাছে শান্তি চেয়েছি।
রাজশাহী থেকে আগত পূজা জানান, আমরা রাস পূর্ণিমায় উৎসব পালন পাশাপাশি মহিলাদের সিঁদুর বিক্রি করেছি, প্রতি বছরই আমরা আসি এ বছর ভালো বিক্রি করেছি। আমরা কুয়াকাটাতে এজন্য প্রতি বছর আসি।
বুধবার সন্ধ্যায় অধিবাসের মধ্য দিয়ে এ উৎসব শুরু হয়ে শুক্রবার সকালে সমুদ্র স্নানের মধ্য দিয়ে এর সমাপ্তি ঘটে। রাস পূজায় অংশ নিতে পুণ্যার্থীদের ভিড়ের পাশাপাশি পর্যটকদের পদচারণা ছিল চোখে পড়ার মতো। এই উৎসবকে নির্বিঘ্ন করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে ছিল কঠোর নজরদারি।
রাস পূজা আয়োজক কমিটির সমন্বয়ক ও কুয়াকাটা সৈকতে শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণ মন্দির তীর্থযাত্রী সেবাশ্রমের সভাপতি কাজল বরণ দাস বলেন, সৈকতের পাড়ে প্রদীপ জ্বালিয়ে প্রার্থনায় বসবেন তারা, পূণ্যার্থীরা সাগরকে সামনে রেখে নির্জনে কৃষ্ণপূজার সঙ্গে দেবতার নীলকমল আর গঙ্গাদেবীর আরাধনায় মগ্ন হয়েছে তারা।
কুয়াকাটা সৈকতে শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণ মন্দির তীর্থযাত্রী সেবাশ্রমের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার নিহার রঞ্জন মন্ডল জানান, বাংলাদেশ একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এই দেশে সবাই মিলে একটি সুন্দর লোকজ সাংস্কৃতিক পরিবেশ গড়ে তুলেছে, যা আমাদের হাজার বছরের ঐতিহ্য। আমাদের এই মন্দিরের পাশেই একটি মসজিদও রয়েছে, তারা আমাদের এই আয়োজনে অনেক সহযোগিতা করেছে। আমাদের মধ্যে বেশ সু-সম্পর্ক।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও কুয়াকাটা বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য সচিব মো. রবিউল ইসলাম বলেন, রাস উপলক্ষে আমরা বিভিন্ন আয়োজন হাতে নিয়েছি, বরাবরের থেকে একটু আলাদা বিনোদন দিতেই আমরা তিনদিনের কনসার্ট, মার্কেটের প্রসার বাড়ানো, আলাদাভাবে মোবাইল টয়লেট, চেইঞ্জিং রুমসহ নানা আয়োজন যে কারণে এবারের আয়োজন প্রত্যেকটা পূণ্যার্থী ও দর্শনার্থী নিরবিচ্ছিন্নভাবে আয়োজন উদযাপন করেছে। আমরা পুরোপুরি এই আয়োজন শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমরা মাঠে আছি।
টুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা রিজিওনের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, ঐতিহ্যবাহী রাস উৎসবকে কেন্দ্র করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে নিরাপত্তায় কঠোর ছিলাম আমরা। আমাদের প্রায় ৪ শতাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত ছিল। আজকে সকালে রাসমেলার আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলেও আমরা সন্ধ্যা পর্যন্ত নিরাপত্তা বহাল রাখবো।