ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

ঈদে খরচ বাড়াবে মসলাও

ঈদে খরচ বাড়াবে মসলাও

.

 জসিম উদ্দিন বাদল

প্রকাশ: ১৪ জুন ২০২৪ | ০১:৪৭ | আপডেট: ১৪ জুন ২০২৪ | ০৭:৪৮

ঈদ সামনে রেখে চড়েছে মসলার বাজার। গত বছর কোরবানির ঈদের তুলনায় এবার প্রায় সব ধরনের মসলার দাম বেশি। প্রকারভেদে দাম ৫ থেকে ৮৭ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। সেই সঙ্গে দাম বাড়ার দৌড়ে রয়েছে ডিম। এ পরিস্থিতিতে ছোট ব্যবসায়ীরা দায় চাপাচ্ছেন আমদানিকারক ও পাইকারদের ওপর। আর আমদানিকারক ও পাইকাররা দাঁড় করাচ্ছেন বিশ্ববাজার, ডলারের দর, পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি ও রপ্তানিকারক দেশগুলোতে উৎপাদন কমে যাওয়াসহ নানা অজুহাত।

তবে ক্রেতাদের অভিযোগ, গত রমজানের আগে নিত্যপণ্যের দর বাড়ান কৌশলী ব্যবসায়ীরা। এবারও সেই পথেই হাঁটছেন তারা। সুযোগ নিচ্ছেন চাহিদা বাড়ার। অসাধু ব্যবসায়ীদের দমাতে বাজারে নামমাত্র তদারকি করে দাম নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে না। এ জন্য সরকারের দৃশ্যমান কঠোর পদক্ষেপ দরকার। তা না হলে কম আয়ের মানুষের সংসার চালানো আরও কঠিন হয়ে পড়বে। এদিকে কোরবানির পশুর চড়া দর নিয়ে ক্রেতারা হতাশ। 

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে কলোনি বাজার থেকে বিভিন্ন মসলা কেনেন ভ্যানচালক আলী হাসান।
 সমকালকে তিনি বলেন, ৩০০ টাকায় যেটুকু মসলা দিলেন দোকানদার, তাতে দুই-তিন দিনও রান্না করা যাবে না। জিনিসপত্রের দাম বাড়লে গরিব মানুষের সংসার চালানো কষ্টকর। 

কারওয়ান বাজারে ৩৫০ টাকা কেজি দরে আদা কেনার পর মণিপুরিপাড়ার বাসিন্দা শাহেদুল আলম বলেন, গরুর বাজারে ব্যাপারীরা যেন দাম বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। একটি ছোট গরু কিনতে গেলে লাখ টাকা দাম হাঁকে। মসলার বাজারেও যেন এমনই প্রতিযোগিতা। যেভাবে বাজারে অভিযান হয়, তাতে ব্যবসায়ীরা ভয় পান না। তারা মনমতো দাম রাখেন। দাম নিয়ন্ত্রণে গত সপ্তাহে মৌলভীবাজারে মসলা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে যেন মসলার দর না বাড়ে, সেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু বাজারে এর প্রমাণ মেলেনি। বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, সাধারণ সময়ের তুলনায় কোরবানির ঈদের আগে মসলার চাহিদা ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বেড়ে যায়। চাহিদা বাড়ার এই সুযোগ লুফে নেন ব্যবসায়ীরা। সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর হুঁশিয়ারিকে আমলে নিচ্ছেন না তারা। এ বছর সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে এলাচের। গত বছরের তুলনায় মসলাটির দর দ্বিগুণের কাছাকাছি। মানভেদে প্রতি কেজি এলাচ বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৬০০ থেকে ৪ হাজার ২০০ টাকা। গত বছর দর ছিল ১ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকা। 

জিরা প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৯০০ টাকা। গত বছর কোরবানির ঈদের আগে জিরা কেনা গেছে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকায়। প্রতি কেজি লবঙ্গের দাম হাঁকছেন বিক্রেতারা ১ হাজার ৭০০ থেকে ১ হাজার ৯০০ টাকা। গত বছর ছিল দেড় হাজার টাকার মতো। গত বছর ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় দারুচিনি কেনা গেছে। এবার কেজিতে গুনতে হবে আরও অন্তত ১০০ টাকা। খুচরা ব্যবসায়ীরা দারুচিনি বিক্রি করছেন ৫৫০ থেকে ৬২০ টাকা কেজি দরে। প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে তেজপাতার দর। প্রতি কেজি তেজপাতা বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকায়। গত বছর এ সময়ে দর ছিল ১২০ থেকে ১৫০ টাকা। 

গত বছরের মতো এবারও আদার বাজারে অস্থিরতার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। মানভেদে প্রতি কেজি আদা বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। গত বছর আদার কেজি ছিল ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। পেঁয়াজের বাজার নিয়ে ঘনীভূত হচ্ছে শঙ্কা। সরকার আমদানির অনুমতি দিলেও ভারত থেকে পেঁয়াজ আসছে কম। ফলে চাহিদার সিংহভাগই মেটাতে হচ্ছে দেশি পেঁয়াজ দিয়ে। প্রতেকেজি দেশি পেঁয়াজ কিনতে ক্রেতাকে খরচ করতে হচ্ছে ৮৬ থেকে ৯০ টাকা। তবে কিছু ব্যবসায়ী আমদানি করা পেঁয়াজ বলে বড় আকারের পেঁয়াজের দাম রাখছেন ৯০ থেকে ১০০ টাকা। রসুনের দরও বেশি। দেশি প্রতিকেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকা এবং আমদানি করা রসুন ২৩০ থেকে ২৫০ টাকা।    

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজারদরের তথ্য অনুযায়ী, এক বছরে দেশি পেঁয়াজের দাম প্রায় ১০ শতাংশ, রসুনের দাম সর্বোচ্চ ৬৯, আদা ২৩, দারুচিনি ১৯, লবঙ্গ ১১, এলাচ ৮৭ ও তেজপাতার দর ৮৫ শতাংশ বেড়েছে। এক বছরে জিরার দাম না বাড়লেও গত এক মাসে বেড়েছে প্রায় ৭ শতাংশ।

কারওয়ান বাজারের আদা-রসুন ব্যবসায়ী এরশাদ মিয়া সমকালকে বলেন, চীন থেকে বেশির ভাগ আদা-রসুন আসে। দেশটিতে আদা-রসুনের মৌসুম শেষ। ডলারের দামও বেশি। এ কারণে পাইকাররা দাম বাড়াচ্ছেন। দাম বাড়লেও গত বছরের তুলনায় এবার বেশির ভাগ মসলার দাম কম বলে দাবি করেন বাংলাদেশ পাইকারি গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি এনায়েত উল্লাহ। সমকালকে তিনি বলেন, বেশির ভাগ এলাচ আসে ভারত থেকে। সেখানে এবার গরমের কারণে উৎপাদন কম হয়েছে। তাছাড়া ডলারের দাম বেশি। এসব কারণে দাম বেড়েছে। পাইকারি বাজারে দাম কম দাবি করে তিনি বলেন, খুচরা ব্যবসায়ীরা ২০, ৫০, ১০০ টাকা করে মসলা বিক্রি করেন, সে জন্য তারা দর কিছুটা বেশি নিচ্ছেন। 

এ বিষয়ে ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, অধদিপ্তরের তদারকিতে মসলার দর বাড়ার তথ্য মিলেছে। দাম বাড়ার জন্য আন্তর্জাতিক বাজারের মূল্য ও পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব, ডলার সমস্যা ইত্যাদি বিষয় উল্লেখ করেন ব্যবসায়ীরা। অভিযান অব্যাহত থাকবে। অযৌক্তিক মূল্য বৃদ্ধিতে জড়িত অসাধু ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় আনা হবে।

এদিকে আবারও বেড়েছে ডিমের দর। বাজারে প্রতি ডজন ফার্মের বাদামি রঙের ডিম ১৬০ থেকে ১৬৫ এবং সাদা ডিম ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বছর সর্বোচ্চ ১৬০ টাকা উঠেছিল ডিমের ডজন। কিছুটা কমতির দিকে মুরগির বাজার। প্রতিকেজি ব্রয়লার ১৭০ থেকে ১৯০ টাকা এবং সোনালি জাতের মুরগি ৩২০ থেকে ৩৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

সবজির বাজারে দেখা গেছে, কোরবানির ঈদে প্রয়োজন হয় এমন কয়েকটি পণ্যের দর বেড়েছে। ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরের টমেটো ১০০ থেকে ১২০ টাকা, ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরের শসা বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা। কাঁকরোল ও কচুরমুখির দর ১০০ টাকার কাছাকাছি। এ ছাড়া অন্যান্য সবজি ও মাছের দর স্বাভাবিক দেখা গেছে। কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ১৮০ থেকে ২০০ টাকা।

আরও পড়ুন

×