ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

ড. ইউনূসকে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের খোলা চিঠি

ড. ইউনূসকে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের খোলা চিঠি

আজ শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই খোলা চিঠি দেওয়া হয়। ছবি: সমকাল

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ আগস্ট ২০২৪ | ১৮:০৬

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি খোলা চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। এই চিঠিতে সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে সারাদেশের সংখ্যালঘুদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়া গভীর শঙ্কা, উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তাময় অবস্থার অবসান কামনা করা হয়েছে।

আজ শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই খোলা চিঠি দেওয়া হয়। সংগঠনের অন্যতম সভাপতি নির্মল রোজারিও খোলা চিঠি ও লিখিত বক্তব্য উত্থাপন করেন।

প্রধান উপদেষ্টার কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী সমাজ প্রতিষ্ঠা ও সংস্কারের লক্ষ্যে ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব অভ্যুত্থানে যে নবযুগের সূচনা হয়েছে, তারই পতাকা বহনের কাণ্ডারি হিসেবে আপনাকে স্বাগত জানাই, অভিনন্দিত করি। অভিনন্দন জানাই পরিবর্তনের সূচনাকারী সেই ছাত্র-জনতাকে, যারা জীবন বাজি রেখে পথে নেমেছেন, দুর্দমনীয় এক অভিযাত্রায় জাতিকে স্বপ্ন দেখিয়েছেন। অভিনন্দন জানাই জনতাকে, যারা এই স্বপ্ন-যাত্রার সাথী হয়েছেন। আমরা বিশ্বাস করি, দেশের ক্রান্তিলগ্ন উত্তরণে ছাত্র-জনতার অর্পিত দায়িত্ব মেধা-মনন এবং দেশ ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অর্জিত সাফল্য কাজে লাগিয়ে জাতির প্রত্যাশা পূরণে আপনি এগিয়ে যাবেন।

এতে বলা হয়, গণঅভ্যুত্থানকে সাফল্যের শিখরে পৌঁছে দিতে যারা অকাতরে প্রাণ দিয়েছেন, আহত হয়েছেন, নির্যাতিত হয়েছেন, আমরা তাঁদের গভীরভাবে স্মরণ করি। নিহতদের পরিবার-পরিজনের প্রতি সমবেদনা জানাই, আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করি। আমরা প্রত্যেক ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে যথোপযুক্ত সহায়তা প্রদানের জন্য নতুন সরকারের প্রতি দাবি জানাই। দাবি জানাই আহত ও নির্যাতিতরা যাতে দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন, তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার। ছাত্র-জনতার এই আত্মদান, ত্যাগ ও সংগ্রাম বাংলাদেশে জাগরণের যে চেতনা প্রজ্বলিত করেছে, তা যেন কখনো কেউ নিভিয়ে দিতে না পারে, মুক্তিযুদ্ধ যেন পথ না হারায়।

আরও বলা হয়, জনতার এই বিজয় যখন চূড়ান্ত লক্ষ্য অভিমুখে এগিয়ে যাচ্ছে, অত্যন্ত দুঃখ ও বেদনার সঙ্গে লক্ষ করছি যে, একটি বিশেষ গোষ্ঠী সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে নির্বিচারে তুলনাহীন সহিংসতা ছড়িয়ে এই অর্জনকে কালিমালিপ্ত করার ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। প্রাপ্ত সাংগঠনিক বিবরণ এবং গণ মাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী ইতোমধ্যে অন্তত ৫২টি জেলায় এই সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় হাজার হাজার হিন্দু পরিবার সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে। অনেক মন্দির হামলার পর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, অনেক মহিলা নিগৃহীত হয়েছেন। কয়েকটি স্থানে হত্যার ঘটনাও ঘটেছে। আক্রান্ত হয়েছে অন্য সংখ্যালঘুরাও। মূলত ৫ আগস্ট থেকে এই সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। সারা দেশের সংখ্যালঘুদের মধ্যে গভীর শঙ্কা, উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তা ছড়িয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতি আন্তর্জাতিকভাবেও বাংলাদেশকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। আমরা অবিলম্বে এই অবস্থার অবসান চাই।

খোলা চিঠিতে বলা হয়, এই পরিস্থিতি আমরা রাষ্ট্রপতি, সেনাপ্রধান, সংগ্রামী ছাত্র নেতৃত্ব এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সম্মানিত নেতৃবৃন্দের কাছে আমাদের বর্তমান সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও জানানোর চেষ্টা করেছি। তারাও তাদের বক্তব্য-ভাষণে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা বন্ধের আহবান জানিয়েছেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি গত তিন দিন ধরে গভীর শূন্যতার মধ্যে পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। আর্তনাদ প্রলম্বিত হচ্ছে।

সবশেষে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের সূচনালগ্নেই আপনার কাছে অত্যন্ত বিনীতভাবে আমাদের উদ্বেগ ও বেদনার জায়গাটি তুলে ধরছি এই প্রত্যাশায় যে, আপনি এবং আপনার সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এই সংকট নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন, যাতে ছাত্র-জনতার বিজয় কলুষিত না হয়। ধর্মীয় জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এই রক্তক্ষরণের অবসান ঘটে।

সংবাদ সম্মেলনে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের পর থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত সারাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা-নির্যাতন-হত্যার পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়।

এ সময়  হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি অধ্যাপক ড. নিম চন্দ্র ভৌমিক, প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজল দেবনাথ, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, রঞ্জন কর্মকার, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। পরিচালনা করেন ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ।

আরও পড়ুন

×