ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

চাপ কমাতে আরাম থেরাপি

চাপ কমাতে আরাম থেরাপি

প্রতীকী ছবি

 আফরোজা চৈতী

প্রকাশ: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২৩:১৪ | আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ১৩:৪৬

‘স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট’ বিষয়টির সঙ্গে আমরা কম-বেশি পরিচিত। মানসিক চাপ এমন এক বিষয়, যা থেকে নিজেকে মুক্ত করা সহজ বিষয় নয়। আধুনিক জীবনে এই স্ট্রেস বা চাপ একটি নিত্যনৈমিত্তিক বিষয়। তবে পুরুষের তুলনায় কর্মজীবী নারীর জন্য এই চাপটা বহুমুখী। ঘরে, বাইরে সমানতালে তাকে দু’হাতে করতে হয় দশভুজা দুর্গার মতো সব কাজ। সেই সঙ্গে আছে শ্বশুরবাড়ি আর বাবার বাড়ির লোকদের জন্য দায়িত্ব আর সামাজিকতার নানা মিষ্টিমধুর ঝক্কি।

করপোরেট সেক্টরে কাজ করেন রীতি চৌধুরী। বাড়ির বড় মেয়ে, আবার শ্বশুরবাড়ির ছোট বউ। দু’দিকে পারিবারিক দায়িত্ব যেমন আছে; তেমনি সবার ভালোমন্দের খোঁজ নেওয়াটা তাঁর প্রতিদিনের অফিসিয়াল কাজের মতোই হয়ে গেছে। ছেলেমেয়েরা একদম ছোট না হলেও, এখনও তাদের পড়ার টেবিল গোছানো থেকে টিফিন সবটা তাঁকেই দেখতে হয়। বাসার রান্নাটাও তাঁর করতে হয়। কারণ কর্তার মুখে তাঁর রান্না ছাড়া ঠিক রোচে না। একসময় তাঁর এটা ভেবে বেশ নিজের ভেতরে সুখী ভাব আসত যে, স্বামী তাঁর রান্না ছাড়া খেতে পারেন না। বাচ্চাদের টিফিন তাঁর হাতে করাটাই অভ্যাস হয়ে গেছে। ছেলে এবার এ লেভেল আর মেয়ে ক্লাস সেভেনে পড়ছে। এখনও খুঁটিনাটি সব বিষয় তাঁকেই দেখতে হয়।

আত্মীয়রাও তাঁকে অনেক বিষয়ে ভরসা করে। তাই তাদের জন্যও আলাদা সময় রাখতে হয়। আর কর্মক্ষেত্র? সেখানেও আছে ডেডলাইন আর টিম ম্যানেজমেন্টের ভারী কাজের বোঝা। এক সময় এই সব কিছু দৌড়ের ওপরে করতে পারলেও চল্লিশে পৌঁছে শরীর মন কোনোটাই যেন আর সায় দিতে চায় না! মেজাজটাও সারাক্ষণ তিরিক্ষি হয়ে থাকে! এই তো সেদিন শুধু শুধুই মেজাজ খারাপ করল এক সহকর্মীর সঙ্গে। সেদিন মেয়েটার এলোমেলো ঘর দেখে যার পর নাই রেগে গিয়ে দুই ঘা বসিয়ে দিল! অথচ ছেলেমেয়ের সব কিছুই তো সে আনন্দ নিয়ে করত! কী হলো হঠাৎ তাঁর! এতো বেশি চাপ যেন নিতে পারছেন না তিনি। 

কী করবেন এই চাপ মোকাবিলা করতে 
খুব সাধারণ একটি বিষয় আছে, সেটি হলো–আরাম থেরাপি। দিনরাত মিলিয়ে আপনি পাচ্ছেন ২৪টি ঘণ্টা। একমাত্র ঘুমের সময়টুকু ছাড়া আপনি কি নিজের জন্য ১৫ বা ৩০ মিনিট সময় রাখেন। হতে পারে সকালে একটু মেডিটেশন বা ইয়োগার চর্চা। এরপর আপনাকে নিজেকে আরাম দিতে কিছু কিছু বিষয় ছেঁটে ফেলতে হবে জীবন থেকে। যেমন প্রায়োরিটি মেনে কাজগুলো ভাগ করে নিন।

ছেলে বা মেয়ের খাবার ও তাদের কিছু কিছু কাজ তাদেরই নিজেদের দায়িত্ব নিয়ে করতে শেখান। স্বামীকে মাঝেমধ্যে আপনার রান্না ছাড়াও অন্য খাবারে অভ্যাস করান। হতে পারে একদিন আপনারা ঘরে হোমমেইড খাবার অর্ডার করে সবাই মিলে খেলেন। পরিবারের বিভিন্ন কাজ সবার মাঝে ভাগ করে দিলেন, হতে পারে গাছে পানি দেওয়া বা ঘর গোছানোর মতো হালকা কিছু কাজ ছেলেমেয়ের ওপর ছেড়ে দিলেন। হয়তো পারফেক্ট আপনার মতো না পারলেও আস্তে আস্তে তারা ঠিকই পারবে।

সবসময়ই টিপটপ না থেকে মাঝেমধ্যে আলসেমি করুন। নিজেকেই নিজে অনুমতি দিন যে, একটি দিন আপনি আলসেমি করবেন। ইগনোর করা মানে অবহেলা নয় বরং ইগনোর মানে আপনার নিজেকে একটু আরাম দেওয়া। কোনো দাওয়াত বা সামাজিক অনুষ্ঠান খুব জরুরি না হলে সেটির বদলে ঘরে সময় দিন, একটু বই পড়ুন অথবা এক কাপ কফি নিয়ে নিজের সঙ্গে সময় কাটান। মোট কথা, নিজেকে একটু সময় দিন। 

একটি যান্ত্রিক মেশিন দীর্ঘদিন চলতে হলেও তাকে সার্ভিসিং করাতে হয় আর সেখানে আপনি জলজ্যান্ত একটি মানবমেশিন। শরীর ছাড়াও আপনার একটি অনুভূতিপ্রবণ মন আছে। চল্লিশ পেরোলে মুড সুয়িংয়ের মতো অনেক বিষয় ঘটে। সেগুলোকে আমলে নিতে হবে। আমলে নিতে হবে হঠাৎ করে একটু কোমর ব্যথা বা ক্লান্তি। আপনি যখন সুস্থ থাকবেন, নিজেকে ভালো রাখবেন; তখন আপনার চারপাশের মানুষগুলোও ভালো বোধ করবে। সবার পায়ের নতুন স্যান্ডাল কেনার আগে নিজের পায়ের ছেঁড়া স্যান্ডালটার দিকে নজর দিন। অন্যের মনের ক্ষত নিরাময়ের আগে নিজের মনের খোঁজ নিন। সবার প্রতি দায়িত্ব পালন করা আপনার নিজের প্রতিও একটি দায়িত্ববোধ রয়েছে, সেটি ভুলে যাবেন না।
 

আরও পড়ুন

×