ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন

সাইবার নিরাপত্তা আইনের বিতর্কিত ৯টি ধারা বাতিল

ইন্টারনেট নাগরিক অধিকার, অনলাইন জুয়া নিষিদ্ধ

সাইবার নিরাপত্তা আইনের বিতর্কিত ৯টি ধারা বাতিল

ফাইল ছবি

 সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ মে ২০২৫ | ০১:২৭ | আপডেট: ০৭ মে ২০২৫ | ০৭:৪০

বিতর্কিত সাইবার নিরাপত্তা আইনের পরিবর্তে আসছে ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ’। নানা আলোচনা-পর্যালোচনার পর অধ্যাদেশটির খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। এতে সাইবার নিরাপত্তা আইনের বিতর্কিত ৯টি ধারা বাদ দেওয়া হয়েছে। মতপ্রকাশের অপরাধের ক্ষেত্রে দুটি অপরাধ প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে রাখা হয়েছে। এগুলো হলো– নারী ও শিশুর প্রতি যৌন নির্যাতনমূলক কনটেন্ট প্রকাশ ও হুমকি এবং ধর্মীয় উস্কানিমূলক বক্তব্য বা কনটেন্টের মাধ্যমে সহিংসতা উস্কে দেওয়া। খসড়ায় প্রথমবারের মতো ইন্টারনেটকে নাগরিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে অনলাইন জুয়া।

মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে বৈঠক হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। পরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলন করে বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানান আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। এ সময় স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।

আসিফ নজরুল বলেন, অধ্যাদেশের খসড়া তৈরি করতে বিভিন্ন পর্যায়ে পরামর্শ করা হয়েছে। খসড়াটি পরিবর্তন করা হয়েছে ২৫ বার। সবশেষে বড় সমালোচক সুশীল সমাজের সঙ্গে তিন ঘণ্টা বসে খসড়াটি চূড়ান্ত করা হয়। মঙ্গলবার উপদেষ্টা পরিষদের সভায় ওঠে। এখন আইন মন্ত্রণালয়ের আইনি যাচাইয়ের (ভেটিং) পর অধ্যাদেশ জারি হবে। আশা করা হচ্ছে, এ সপ্তাহের মধ্যে এটি কার্যকর হবে।

প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে বিতর্কিত সাইবার নিরাপত্তা আইনের ৯টি ধারা বাদ দেওয়া হয়েছে বলে জানান আইন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, এই ধারাগুলো ছিল ‘কুখ্যাত’। সাইবার নিরাপত্তা আইনের ৯৫ শতাংশ মামলাই এসব ধারায় হয়েছিল। এই মামলাগুলো এখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে। এ ছাড়া ইতঃপূর্বে বিভিন্ন ধারায় যেসব মামলা করা হয়েছিল, সেগুলোও বাতিল হয়ে যাবে।

আইন উপদেষ্টা বলেন, মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় সংগীত বা জাতীয় পতাকা সম্পর্কে বিদ্বেষ, বিভ্রান্তি ও কুৎসামূলক প্রচারণার দণ্ড-সংক্রান্ত বিধান বিলুপ্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া মানহানিকর তথ্য প্রকাশ, প্রচার ইত্যাদি সংক্রান্ত ধারা সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়েছে। 
এই ধারায় অনেক সাংবাদিকও ভুক্তভোগী হয়েছেন বলে মন্তব্য করেন আসিফ নজরুল। আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানো, আক্রমণাত্মক, মিথ্যা বা ভীতি প্রদর্শন, তথ্য-উপাত্ত পাঠানো, প্রকাশ ইত্যাদি ধারাও বিলুপ্ত করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

কিছু ধারায় পরিবর্তন এসেছে উল্লেখ করে আইন উপদেষ্টা বলেন, স্পিচ অফেন্স-সম্পর্কিত বা কথা বলে বা মতপ্রকাশের অপরাধের ক্ষেত্রে দুটি অপরাধ প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো নারী ও শিশুর প্রতি যৌন নির্যাতনমূলক কনটেন্ট প্রকাশ ও হুমকি। আরেকটি ধর্মীয় ঘৃণা ছড়ানোর মধ্য দিয়ে সহিংসতা উস্কে দেওয়া। ধর্মীয় ঘৃণাকে সুনির্দিষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে, যাতে ভুল বোঝাবুঝি না হয় এবং হয়রানি করতে না পারে। ধর্মীয় উস্কানিমূলক বক্তব্য বা যে কোনো কনটেন্ট, যেটি সহিংসতা উস্কে দিতে পারে, সেটিকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করা হয়েছে। এই দুটি ধারার ক্ষেত্রে রক্ষাকবচও রাখা হয়েছে বলে জানান আসিফ নজরুল।

তিনি বলেন, এ ধরনের মামলা কারও বিরুদ্ধে হলে আমলি আদালতে যাবে। এর পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিচারক যদি দেখেন এই মামলায় কোনো সারবত্তা নেই, তাহলে তিনি প্রাক-বিচার পর্যায়েই তা বাতিল করে দিতে পারবেন। অর্থাৎ চার্জশিটের (অভিযোগপত্র) জন্যও অপেক্ষা করতে হবে না। এগুলো কিছু ক্ষেত্রে আপসযোগ্য রাখা হয়েছে। এ ছাড়া কথা বলা বা মতপ্রকাশ-সংক্রান্ত অপরাধ বিষয়ের ক্ষেত্রে জামিনযোগ্য করা হয়েছে।

প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) মাধ্যমে যদি সাইবার অপরাধ করা হয়, তাহলে সেটি শাস্তিযোগ্য করা হয়েছে বলে জানান আইন উপদেষ্টা।

সাইবার নিরাপত্তা কাউন্সিলে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি রাখার বিধান রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, কনটেন্ট অপসারণের পর আদালতের অনুমতি নিতে হবে। আদালত যদি বলেন এই কনটেন্ট অপসারণ করা যাবে না, তাহলে তা পুনর্বহাল করতে হবে। যে কনটেন্ট অপসারণ করা হবে, সেটি সম্পর্কে মানুষকে জানাতে হবে।

দ্রুত নিষ্পত্তি হবে দেওয়ানি মামলা
আসিফ নজরুল বলেন, সিভিল প্রসিডিউর অ্যাক্ট বা দেওয়ানি কার্যবিধির চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। এর ফলে জমিজমা বা সম্পত্তিসংক্রান্ত মামলার নিষ্পত্তি নিয়ে বছরের পর বছর আদালত চত্বরে কাটাতে হবে না। দ্রুত মামলার নিষ্পত্তি হবে।

তিনি বলেন, সিভিল প্রসিডিউর অ্যাক্টের মামলা (দেওয়ানি মামলা) নিষ্পত্তি করতে বছরের পর বছর লেগে যেত। আমরা অনেক পরিবর্তন এনেছি। আগে যখন-তখন বা ইচ্ছেমতো মামলার শুনানি মুলতবি করা যেত। এখন সেটা করা যাবে না। সর্বোচ্চ চারবার পর্যন্ত করা যাবে। আগে আরজি বা রিটেন স্টেটমেন্ট দেওয়া হতো, যেটা আইনজীবীরা বলতেন আর আদালত শুনতেন। এমনও হতো ওই আরজি মৌখিকভাবে শুনতে শুনতেই দুই থেকে তিন বছর কেটে যাওয়ার নজির আছে। আমরা বলেছি, লিখিত আকারে যেটা দেওয়া হবে, সেটা আর মৌখিকভাবে উপস্থাপন করতে হবে না। সমন জারিসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে সহজসাধ্য পদ্ধতি উদ্ভাবন করা হয়েছে। আশা করি সিভিল মামলা দ্রুত নিষ্পত্তিতে এই আইন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এখন সমন জারির পাশাপাশি হোয়াটসঅ্যাপ, ই-মেইল, মেসেঞ্জারে বার্তা পাঠানো যাবে।

তরুণদের প্রযুক্তিবিষয়ক প্রশিক্ষণ দেবে সরকার
সংবাদ সম্মেলনে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, দেশের তরুণ ও যুবসমাজকে এআইসহ প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ দেবে অন্তর্বর্তী সরকার। তরুণদের দক্ষ করে গড়ে তোলার কাজ চলছে। আগামী জুন-জুলাই থেকে এ প্রশিক্ষণ কর্মসূচি শুরু হতে পারে।

আরও পড়ুন

×