‘চাঁদা’ না পেয়ে গরু নিয়ে যাওয়া স্বেচ্ছাসেবক দলের সেই নেতা বহিষ্কার
ভুক্তভোগীকেই মামলা করলে এলাকা ছাড়া করার হুমকি

গরুর বাছুর কোলে নিয়ে নার্গিস বেগম। ছবি: সমকাল
ঝালকাঠি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৬ মে ২০২৫ | ২১:০৪
ঝালকাঠির রাজাপুরে ‘চাঁদার’ টাকা না পেয়ে এক গৃহবধূর গরু নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা বেলাল খানকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আজ শুক্রবার রাজাপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক রতন দেবনাথ ও সদস্য সচিব আমিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘বিভিন্ন জাতীয় গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমরা অবগত হই যে, আপনি মো. বেলাল হোসেন খান পাওনা টাকা আদায় করতে গিয়ে জনৈক আবু বক্করের (ভুক্তভোগী নারী নার্গিস বেগমের স্বামী) পোষা গাভী তার গোয়াল থেকে নিয়ে এসেছেন। যাহা বিভিন্ন প্রচারমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। আমরা অত্যন্ত ব্যথিত হই। আপনার এই কর্মকাণ্ড কোনো সভ্যসমাজের আচরণ হতে পারে না। যেহেতু আপনি জেনেশুনে এ ধরনের কাজে লিপ্ত হয়েছেন, তাই দল আপনার বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে সমস্ত পদ ও পদবী এবং দল থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হলো।’
এদিকে নার্গিস বেগম অভিযোগ করে বলেন, ‘আমি ঝালকাঠি গিয়ে সাংবাদিকদের কাছে ঘটনা জানিয়ে দেওয়ায় সালিশ বৈঠকে উপস্থিত উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কালাম আজাদের ভাতিজা নাজমুল হুদা ওরফে চমন আমাকে দুটি থাপ্পড় মারে। পরে একটি স্ট্যাম্পে ২৬ হাজার ৬০০ টাকা পাওনা আছে বলে আমাকে স্বাক্ষর দিতে বাধ্য করে আমার গরুটি ফেরত দেয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার স্বামী এই টাকা নিয়েছে কিনা, তা আমি জানি না। সেই মিথ্যা অভিযোগ আমার ওপর চাপিয়ে নিজেদের অপরাধ চাপা দিয়ে আমার স্বাক্ষর নিয়ে উল্টো আমাকেই হুমকি দিচ্ছে এলাকা ছাড়া করার। এ বিষয়ে আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা কামনা করছি।’
গৃহবধূ নার্গিসের স্বামী আবু বক্কর বলেন, ‘শাহজাহান ওমর এমপি থাকাকালীন কালাম চেয়ারম্যান ও তার লোকজন আরেকটি গরু নিয়ে জবাই করে খেয়েছে। শাহজাহান ওমর এ ঘটনা শুনে ওই গরুর দাম দিয়েছিল। এরা দীর্ঘদিন ধরেই আমার ও আমার পরিবারের ওপর এভাবে নির্যাতন চালিয়ে আসছে।’
রাজাপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে একটি সুষ্ঠু সমাধান হয়েছে, এটাই বড় বিষয়। তাছাড়া এরা আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করছে, তার কোনো ভিত্তি নেই। আর নার্গিসের স্বামী ৫ আগস্টের পর থেকে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে।’
রাজাপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক রতন দেবনাথ বলেন, ‘দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বেলাল হোসেন খানকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি যে ঘটনা ঘটিয়েছেন, তা দলের জন্য অসম্মান ও লজ্জাজনক।’
উল্লেখ্য, গত ১৪ মে ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে না পেয়ে গৃহবধূ নার্গিস বেগমের গাভী নিয়ে যায় বেলাল খান। তিনি শুক্তাগড় ইউনিয়নের বামন খান গ্রামের আজিজ খানের ছেলে এবং একই ইউনিয়নের বাসিন্দা রাজাপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালামের আজাদের অনুসারী। এরপর গৃহবধূ ১৫ মে ঘটনার বিচার পেতে ঝালকাঠি আদালত পাড়ায় ছুটে আসেন। এলাকায় নিরাপত্তা না থাকায় সাথে তিন বছর বয়সের শিশু ও গরুর বাচ্চাটি নিয়ে ঝালকাঠিতে আশ্রয় নেন। বিষয়টি সামাজিক মাধ্যমে উঠে আসায় এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। একপর্যায়ে ওইদিনই বেলাল ঝালকাঠিতে ছুটে এসে গৃহবধূকে গাভী ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাজাপুর ফিরিয়ে নিয়ে যান।
- বিষয় :
- ঝালকাঠি
- বিএনপি
- স্বেচ্ছাসেবক দল
- বহিষ্কার