বিষমুক্ত দেশি ফল তাল শাঁস

ফাইল ছবি
নবীউর রহমান পিপলু
প্রকাশ: ৩১ মে ২০২৫ | ০০:০৬ | আপডেট: ১৫ জুন ২০২৫ | ১৭:৪৭
নাটোরে গ্রীষ্মকালীন ফল হিসেবে তালের শাঁসের কদর বেড়েছে। মধু মাসখ্যাত বাংলার জ্যৈষ্ঠ মাসে এই তাল শাঁস বাজারে আসে। এই মধু মাসে রসালো আম, জাম, কাঁঠাল ও লিচু অন্যান্য ফলের সমাগম হয়। তবে এসব ফলে ফরমালিন ও কীটনাশক ছিটানো হলেও তাল শাঁসে ফরমালিনের কোনো বিষ থাকে না। এ কারণে মানুষের কদর বাড়ছে তাল শাঁসে। অপরিপক্ব এই তালের শাঁসকে স্থানীয় ভাষায় তালকুড় বলা হয়। তালের শাঁসের পুষ্টিগুণও রয়েছে বলে জানান চিকিৎসকরা।
‘ঐ দেখা যায় তাল গাছ, ঐ আমাদের গাঁ, ঐ খানেতে বাস করে কানা বগির ছা’ খান মঈনুদ্দীনের ‘কানা বগির ছা’ ছড়াতে গাঁয়ের তাল গাছে এখন বকের ছানা থাক বা না থাক, তাল গাছগুলো কিন্তু কচি তালে ভরে গেছে। তাই গাছে কচি তাল ভরে উঠতে দেখে গাছি বা ব্যবসায়ীরা এসব কচি তাল কিনে হাট-বাজারে তাল শাঁস বিক্রি করেন।
একমাত্র ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ এই দুই মাস গ্রীষ্মকাল। এই গ্রীষ্মকালের পুরো বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠের শুরুর দিকে যেমন কাঁচা আম পাওয়া যায় তেমন জ্যৈষ্ঠ মাসের মাঝামাঝি থেকে পাওয়া যায় রসালো আম, জাম, কাঁঠাল ও লিচু। এ কারণে এই মাসকে মধু মাস বলা হয়। এই মধু মাসে মৌসুমি ফল আম, জাম, কাঁঠাল ও লিচুর পাশাপাশি পাওয়া যায় তালের নরম শাঁস। রসে ভরা এসব ফল সুন্দর ও তাজা রাখতে অসাধু ব্যবসায়ীরা ফলে ফরমালিন বা রাসায়নিক মিছিয়ে দেন। ফলে এসব ফল বিষ যুক্ত হয়ে স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। এ সব কারণে মানুষ ঝুঁকে পড়ছেন পুষ্টিগুণসম্পন্ন গ্রীষ্মকালীন ফল তালের শাঁসে (তাল কুড়)। তাই কদরও বেড়েছে এই ফলের।
তাল কুড় বিক্রেতা মো. খোকন আলী জানান, গ্রীষ্ণ মৌসুমে তিনি প্রতিদিন সদর উপজেলার ঠাকুর লক্ষিকুল গ্রাম থেকে তাল বিক্রি করতে শহরে আসেন। প্রতিদিন ৩শ থেকে ৪শ তাল নিয়ে আসেন। তিনি প্রতি বছরই এ সময়ে তালের শাঁস বিক্রি করেন। গ্রামাঞ্চলে ঘুরে ঘুরে তাল কিনে নিয়ে আসেন। গাছে উঠতে কষ্ট হলেও ওই গাছ থেকে তাল তাদেরই পাড়তে হয়। হাট-বাজারে নিয়ে তারা তাল কেটে বের হওয়া নরম শাঁস বিক্রি করেন। বৈশাখ থেকে জ্যৈষ্ঠ মাসে গাছে তাল কুড় থাকে।
সদর উপজেলার পাইকেরদোল এলাকার মাহতাব বলেন, তিনি মৌসুমের আগে তাল গাছ কিনে থাকেন। একেকটি গাছ তিনশ থেকে চারশ টাকায় কেনেন। প্রতিদিন ওই সব গাছ থেকে তাল নামিয়ে এনে বাজারে তালের শাঁস বা তালকুড় বিক্রি করেন। ২শ থেকে ৩শ পিস তালের শাঁস বিক্রি করেন। একটি তালে সর্বোচ্চ তিনটি করে তাল শাঁস থাকে। বিষমুক্ত ও পুষ্টিগুণ হওয়ায় এই তালকুড়ের চাহিদা বেড়েছে। বিক্রেতাদের অনেকেই বিভিন্ন হাটবাজারে, অটোরিকশা, অটো ভ্যানস্ট্যান্ড এবং অলিগলিতে তালের শাঁস (তালকুড়) বিক্রি করেন। ফেরি করেও বিক্রি করেন কেউ কেউ।
শহরের বড়গাছা এলাকার বাসিন্দা মাসুদুর রহমান মাসুদ এবং আবু মুসা নামে দুই ক্রেতা বলেন, বর্তমানে বাজারে অধিকাংশ ফল-ফলাদি ও শাকসবজিসহ মাছ-মাংস সব কিছুই কোনো না কোনোভাবে ফরমালিন বা কীটনাশক ছিটিয়ে বাজারজাত করা হয়; যা মানুষের শরীরের জন্য বিষ। তালের শাঁস বা তালকুড়ে ভেজাল কিছুই থাকে না । শতভাগ নেচারাল ফল এবং পুষ্টিগুণও রয়েছে এতে। এ কারণে এখন অনেকেই এই তালকুড় খেতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছেন। অনেকেই তালকুড় কাটার সঙ্গে সঙ্গে বিক্রেতার সামনেই খান। অনেকেই পার্সেল করে বাড়ি নিয়ে যান। এই ফল এখন সব বয়সী মানুষের কাছে প্রিয় খাদ্য। ফলটা লোভনীয় হওয়ায় বাজারে এখন এ তালকুড়ের চাহিদা বেড়েছে। পরিবারের জন্য পার্সেল করে বাসায় নিয়ে যান।
নাটোর সদর হাসপাতালের অবসরপ্রাপ্ত আরএমও ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘তাল শরীরের জন্য খুব উপকারী একটি ফল। তালের শাঁসে থাকা জলীয় অংশ পানিশূন্যতা দূর করে। তালে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। কচি তালের শাঁস রক্তশূন্যতা দূর করে এবং চোখের দৃষ্টিশক্তি ও মুখের রুচি বৃদ্ধি করে। এছাড়া তালে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন সি এবং ভিটামিন বিসহ নানা ধরনের ভিটামিন রয়েছে।’
- বিষয় :
- তালশাঁস
- নবীউর রহমান পিপলু