ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

পরকীয়া সন্দেহে স্ত্রীকে খুনের পর ৪ টুকরা, স্বামী গ্রেপ্তার

পরকীয়া সন্দেহে স্ত্রীকে খুনের পর ৪ টুকরা, স্বামী গ্রেপ্তার

নয়ন মিয়া। ছবি: সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাভার

প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০২৪ | ২০:৪৪ | আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২৪ | ২২:৪১

স্বামী সবসময় সন্দেহ করত স্ত্রী শান্তনা অন্য কারও সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়েছে। এ সন্দেহের জেরে গৃহবধূ শান্তনা বেগমকে (২৮) হত্যার পর লাশ চার টুকরা করে গুমের চেষ্টা করেছিল তাঁর স্বামী নয়ন মিয়া। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। সোমবার রাতে সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের দত্তপাড়া মহল্লার সেতু নার্সারি থেকে শান্তনার খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রথমে মস্তকহীন ও দুই হাতের কবজি কাটা অবস্থায় শান্তনার বিবস্ত্র দেহ পাওয়া যায়। পরে মরদেহের প্রায় ১৫০ গজ দূরে পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় লাশের দুই হাত ও মাথা উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় আজ মঙ্গলবার সকালে মোবাইল ট্র্যাক করে নয়নকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

এ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে আজ নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) শাহিনুর কবির। তিনি বলেন, পরকীয়া সন্দেহের জের থেকেই এ নির্মম হত্যাকাণ্ড। এ ঘটনায় নিহতের বোন পারুল বেগম মামলা করেছেন। নয়নকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তবে সে এখনও স্বীকারোক্তি দেয়নি।

পুলিশ জানায়, শান্তনার আগেও একটি বিয়ে হয়েছিল। তাঁর প্রথম স্বামী জহুরুলের বাড়ি টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে। তাদের প্রতিবেশী ছিল নয়ন। সাত মাস আগে নয়নের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন শান্তনা। নয়ন তাঁকে ফুসলিয়ে সাভারের বিরুলিয়ার দত্তপাড়ায় সোহেলের বাড়িতে নিয়ে আসে। সেখানে তারা বাসা ভাড়া নিয়ে থাকত। জহুরুলের ঘরে শান্তনার ১৫ বছর বয়সী একটি মেয়ে রয়েছে। এ ছাড়া ঘাতক নয়নেরও আগের স্ত্রী এবং তিন সন্তান আছে। পেশায় রাজমিস্ত্রি নয়ন টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর উপজেলার মর্শামোড়া গ্রামের বাদল মিয়ার ছেলে।

এএসপি শাহিনুর কবির বলেন, বিরুলিয়ায় বসবাসের শুরু থেকেই শান্তনা এবং নয়নের মধ্যে পারিবারিক কলহ লেগে থাকত। নয়ন সবসময় শান্তনাকে সন্দেহ করত যে, তার স্ত্রী বিভিন্ন ছেলের সঙ্গে পরকীয়ায় লিপ্ত। শান্তনা গত তিন আগে তাঁর মাকে ফোন করে জানান, নয়ন সবসময় তাঁকে সন্দেহ এবং মারধর করে। তোমরা এ বিষয়ে কাউকে কিছু বলো না, তাহলে সে আমাকে মেরে ফেলতে পারে। কিন্তু মাকে ফোন করার বিষয়টি নয়ন জানতে পেরে শান্তনাকে মারধর করে। এ সময় শান্তনা রাগ করে বাসা থেকে বের হয়ে গেলে নয়নও তাঁর পেছনে পেছনে যায়। তারা দত্তপাড়া এলাকার সেতু নার্সারির পাশ দিয়ে ঘোরাফেরা করে। আমরা প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিশ্চিত হয়েছি, নয়নই শান্তনাকে হত্যা করেছে। হত্যার আলামত হিসেবে একটি দা উদ্ধার করা হয়েছে। ভুক্তভোগীর মাথাটি দ্বিখণ্ডিত অবস্থায় পাওয়া গেছে। মৃত ব্যক্তিকে কেউ যাতে না চিনতে পারে, এ জন্য তাঁর জামাকাপড় সব খুলে ফেলা হয়েছে। মাথা ও হাতের দুই কনুই কেটে আলাদা করা হয়েছে, যাতে লাশ শনাক্ত করা না যায়। আমরা ঘটনাস্থলের আশপাশে তল্লাশি চালিয়ে রক্তমাখা জামাকাপড় এবং খণ্ডিত লাশ উদ্ধার করেছি। সেখানে ঘাতকের এক জোড়া স্যান্ডেলও পড়ে ছিল। এ হত্যাকাণ্ডে আর কেউ জড়িত থাকলে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।

সাভার মডেল থানার ওসি জুয়েল মিঞা জানান, আজ বুধবার ঘাতক নয়নকে আদালতে পাঠানো হবে।

এদিকে সাভারের বিরুলিয়ায় গৃহবধূ শান্তনা বেগমের নৃশংস হত্যাকাণ্ডে গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। বিবৃতিতে বলা হয়, বর্তমানে নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতার ঘটনা ভয়াবহভাবে বেড়ে চলেছে। এ ধরনের সহিংসতার ঘটনা নারীদের সামাজিক নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে নাজুক করে তুলছে। মহিলা পরিষদ এ অবস্থা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে দ্রুত বিচার নিশ্চিতকরণে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের জোর দাবি জানাচ্ছে।

আরও পড়ুন

×