ঢাকা বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫

বারুগ্রাম আবাসন প্রকল্প

নানা সংকটে আবাসন ছাড়ছেন বাসিন্দারা

নানা সংকটে আবাসন ছাড়ছেন বাসিন্দারা

বালিয়াকান্দি উপজেলার বহরপুর ইউনিয়নে বারুগ্রাম আবাসন প্রকল্প। ছবি: সমকাল

বালিয়াকান্দি (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৬ জুন ২০২৫ | ০৩:৫০

রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দির বহরপুর ইউনিয়নে গড়ে ওঠা বারুগ্রাম আবাসন প্রকল্পটি ঘরহীন, ভূমিহীনদের নতুন স্বপ্ন দেখিয়েছিল। সময়ের বিবর্তনে বাসিন্দাদের সেই রঙিন স্বপ্ন বিবর্ণ হয়েছে। দীর্ঘদিনেও সংস্কার না হওয়াসহ নানা সংকটে বসবাসের অযোগ্য হওয়ায় একে একে আবাসন ছেড়ে চলে যাচ্ছেন বাসিন্দারা।

বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০১ সালে ভূমিহীন ও অসহায় মানুষের বাসস্থানসহ কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে বারুগ্রামে সাড়ে আট একর খাস জমিতে আবাসন নির্মাণের প্রকল্প নেওয়া হয়। প্রকল্পটির কাজ বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। ২০০৭ সালের ১২ ডিসেম্বর এ প্রকল্প আলোর মুখ দেখে। আবাসনটিতে ১৮টি ব্যারাক ঘর তৈরি করা হয়। প্রতিটি ব্যারাকে ১০টি করে পরিবার নিয়ে মোট ১৮০টি পরিবার আবাসনে ঠাঁই পায়।

প্রকল্পের বাসিন্দাদের কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে সেখানে দেড় একর আয়তনের একটি পুকুর খনন করা হয়। পুকুরের দুই পাশ দিয়ে তৈরি করা হয় টিনশেডের ঘর। আবাসনের বাসিন্দাদের ব্যবহারের জন্য স্থাপন করা হয় ১৬টি টিউবওয়েল ও ১৮টি টয়লেট।

সরেজমিন দেখা যায়, আবাসন গড়ে ওঠার ১৮ বছর কেটে গেলেও কোনো সংস্কার কাজ হয়নি। দীর্ঘদিন ঘরগুলো সংস্কার কাজ না হওয়ায় টিনের চাল ছিদ্র হয়ে গেছে। একটু বৃষ্টি হলেই ঘরের মেঝেতে পানি পড়ে। ঘরের চারপাশের টিনগুলো মরিচিকা ধরে হাজার হাজার ছিদ্র হয়েছে। ঘরে ওঠার পাকা সিঁড়িগুলোর নিচ থেকে মাটি সরে গিয়ে তা ভেঙে পড়ছে। ৩০০ মানুষের জন্য এখন মাত্র ৪টি টিউবওয়েল সচল রয়েছে। যে ঘরগুলো তৈরি করা হয়েছিল মানুষের থাকার জন্য, সেই ঘরগুলোতে এখন থাকছে গরু-ছাগল। প্রকল্পের সবগুলো টয়লেটই এখন ব্যবহারের অনুপযোগী। টয়লেট থেকে চারপাশে ছড়িয়ে পড়ছে দুর্গন্ধ। বাসিন্দাদের চলাচলের জন্য একটি ব্যারাকের সামনের রাস্তাটি কাদায় ভরা। আবাসনে থাকা শিশুদের কথা চিন্তা করে স্থানীয় প্রশাসন সেখানে একটি প্রাক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু করেছিল। এখন সেটি বন্ধ আছে। নিকটতম প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে। এতে স্কুলে যেতে আগ্রহ হারাচ্ছে এখানকার শিশুরা। বসবাসের অনুপযোগী হওয়া এবং কোনো কর্মসংস্থানের সৃষ্টি না হওয়ায় আবাসন ছেড়ে চলে যাচ্ছেন বাসিন্দারা। আবাসনের ১৮০ পরিবারের মধ্যে ৭০টি পরিবার এখনও সেখানে বসবাস করছে।

আবাসনের বাসিন্দা মহিউদ্দিন শেখ, নূরজাহান বেগম, সোহরাব শেখ জানান, নতুন আশার আলো আর বুব ভরা স্বপ্ন নিয়ে তারা এখানে এসেছিলেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের সেই স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছে। এখন তাদের জীবনে শুধুই অন্ধকার। 

আরেক বাসিন্দা জরিনা ও জোস্না বেগম জানান, তারা দু’জনই বিধবা। সরকার বিধবা ভাতা দিলেও তাদের ভাগ্যে জোটেনি। বারবার জনপ্রতিনিধিদের কাছে ধরনা দিয়েও কাজ হয়নি। সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধাই এখানে এসে পৌঁছায়না। 

আবাসনের সাধারণ সম্পাদক সুজন শেখ জানান, আবাসনের ঘরগুলো একেবারেই বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এখানকার বাসিন্দাদের জন্য কর্মসংস্থানেরও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। হতাশা থেকে ইতোমধ্যে ১১০টি পরিবার আবাসন ছেড়ে অজানা গন্তব্যে চলে গেছে। তিনি বলেন, আবাসন প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পর থেকে এখন পর্যন্ত এখানে সংস্কারের জন্য কোনো বরাদ্দ আসেনি। শুধু ২০১৭ সালে সোলার প্যানেলের জন্য ১ লাখ ৪৪ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। সেই অর্থ দিয়ে নামেমাত্র কাজ হয়েছে। 

ইউএনও চৌধুরী মুস্তাফিজুর রহমান জানান, সরেজমিন পরিদর্শন করে আবাসনটির বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবেন তিনি।

আরও পড়ুন

×