'বিয়ের এক সপ্তাহের মাথায় গায়ে হাত তোলে স্বামী-শাশুড়ি'

রামিসা তাবাস্সুম আলিনা
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২ আগস্ট ২০২১ | ০৩:৪৪
গত বছরের সেপ্টেম্বরে সরকারি এক কর্মকর্তার ছেলে তানভীর কামাল তন্ময়ের সঙ্গে ফেসবুকে পরিচয় হয় ম্যাপললিফ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের শিক্ষার্থী রামিসা তাবাস্সুম আলিনার। পরে দুই পরিবারের সম্মতিতে গত ১২ মার্চ তারা বিয়ে করেন। এর আটদিন পর আলিনাকে আনুষ্ঠানিকে তুলে নেয় তন্ময়। তবে বিয়ের এক সপ্তাহের মাথায় যৌতুকের জন্য আলিনার ওপর নির্যাতন শুরু হয়। এ ঘটনায় ইতোমধ্যে আদাবর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন আলিনা।
১৯ বছর বয়সী আলিনা বলেন, 'আমার এক বছর বয়সে বাবা-মায়ের ডিভোর্স হয়ে যায়। পরে মা দ্বিতীয় বিয়ে করে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী হন। বাবাও দ্বিতীয় বিয়ে করে রাজধানীতেই বসবাস করছেন। বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের পর থেকে শ্যামলীতে নানুর বাসায় থেকেই বড় হই। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ফেসবুকে তন্ময়ের সঙ্গে পরিচয় হয়। পরিচয়ের পাঁচমাস পর চলতি বছরের মার্চে আমাদের বিয়ে হয়। ১২ মার্চ কাবিন হওয়ার ৮ দিন পর তারা আনুষ্ঠানিকভাবে আমাকে উঠিয়ে নেয়।
তিনি বলেন, 'বিয়ের তিনদিনের মাথায় ঋণ শোধের কথা বলে আমার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে থাকা ৮ লাখ টাকা নিয়ে নেয় তন্ময়। তখন পর্যন্ত আমি বুঝতে পারিনি এটা যৌতুক হিসেবে আমার কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে। বিয়ের এক সপ্তাহের মাথায় তন্ময় ও তার মা আমার গায়ে প্রথম হাত তোলে। ওইদিন তারা জানায়, তন্ময় লন্ডনে উচ্চতর ডিগ্রি নিতে যাবেন। সব মিলিয়ে ৭০ লাখ টাকা লাগবে। তারা আমার নানার পরিবারের কাছ থেকে টাকাটা এনে দিতে বলে। টাকা আনতে পারবো না বলার পর মা-ছেলে মিলে আমাকে মারধর করে। এরপর থেকে নিয়মিত আমার ওপর চলতো নির্যাতন। গত ১৭ জুন আমাকে টানা এক ঘণ্টা পেটানো হয়। এক পর্যায়ে নাক দিয়ে প্রচণ্ড রক্তক্ষরণ হয়। এছাড়া শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে সে আমাকে নির্যাতন করে। ওইদিন রাতে প্রতিবেশীদের ফোন পেয়ে পুলিশ এলেও আমি পুলিশকে জানাই, মামলা করবো না। আমি সংসার করতে চাই।'
আলিনা বলেন, 'এরপর কিছুদিন বিরত থাকলে ফের শুরু হয় মারধর। এ পর্যায়ে বাঁচার জন্য আমি ফেসবুকে মেয়েদের একটি গ্রুপে পোস্ট লিখি- ‘আই নিড হেল্প’। পরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হই। হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরি।'
তিনি বলেন, 'আমার স্বামীর সঙ্গে আরও একাধিক নারীর বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক ছিল। সব মেনে নিয়ে সংসার করতে চেয়েছি। তবে নির্যাতন সইতে না পেরে একাধিক আইনজীবীর দ্বারস্থ হলেও কারো সহযোগিতা পাইনি। সংশ্লিষ্ট থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ দিলেও কোনো আইনি সহায়তা পাইনি। উল্টো শ্বশুরবাড়ির লোকজন প্রতিনিয়ত নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে।
পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. শহীদুল্লাহ বলেন, নারী নির্যাতনের বিষয়গুলো আমরা সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে দেখি। তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। আমাদের কাছে যারাই আইনি সহযোগিতা নিতে আসেন তাদের প্রত্যেককেই সহায়তা দেওয়া হয়। ভুক্তভোগী ওই নারী আদাবর থানায় একটি অভিযোগ দিয়ে গেছেন। তবে আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত আসেননি।