ওজন কমাতে কী খাবেন, কী খাবেন না

ফাইল ছবি
ইসরাত জাহান ইফাত
প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২৫ | ০০:৩৬ | আপডেট: ২৫ জুন ২০২৫ | ১৩:৫২
বর্তমান সময়ে অতিরিক্ত ওজন একটি সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে; যা থেকে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগসহ নানা জটিলতা দেখা দেয়। ওজন কমাতে সবচেয়ে কার্যকর ও নিরাপদ পদ্ধতি হলো দৈনন্দিন ক্যালরি গ্রহণ যেন ক্যালরি ব্যয়ের চেয়ে কম হয়, অর্থাৎ ক্যালরি ঘাটতি তৈরি করা। প্রতিদিন ৫০০-৭৫০ কিলোক্যালরি ঘাটতি তৈরি করলে সপ্তাহে ০.৫-১ কেজি ওজন কমানো সম্ভব। তবে ক্যালরি কমালেই চলবে না, শরীরকে সুস্থ রেখে ওজন কমাতে হলে খাবার হতে হবে পুষ্টিকর ও সুষম।
কী খাবেন
প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার: প্রতি বেলার খাবারে রাখুন পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন জাতীয় কোনো খাবার। যেমন– মাছ, ডিম, মুরগি, ডাল, দুধ, টক দই ও বাদাম। প্রোটিন হজমে সময় নেয়, পেট ভরা রাখে এবং পেশি গঠনে সহায়ক, যা ওজন কমানোর সময় শরীরকে শক্তি জোগায়।
ফাইবার ও কমপ্লেক্স কার্বহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার: প্রতি বেলার খাবারে রাখুন পর্যাপ্ত পরিমাণে মৌসুমি রঙিন শাকসবজি ও সালাদ। এতে প্রচুর ভিটামিন মিনারেলস ও ফাইবার বা আঁশ থাকে, যা হজমে সহায়তা করে। প্রতিদিন অন্তত ৪০০ গ্রাম টাটকা কম মিষ্টি ফল ও শাকসবজি খাবেন। এ ছাড়া ফাইবারযুক্ত কার্বোহাইড্রেট পরিমিত পরিমাণে গোটা শস্য তথা লাল চালের ভাত, লাল আটার রুটি, ওটস, মিষ্টি আলু, ভুট্টা রাখলে এই জাতীয় খাবার দীর্ঘক্ষণ হজম হতে সময় নেয়। ফলে বেশি সময় ধরে ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে রাখে ও এনার্জি সাপ্লাই করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুসারে, প্রতিদিন প্রাপ্তবয়স্ক একজন মানুষের অন্তত ২৫-৩০ গ্রাম আঁশ গ্রহণ করা উচিত।
গুড ফ্যাট বা স্বাস্থ্যকর চর্বি: বাদাম, চিয়া সিড, ফ্ল্যাক্স সিড, ফ্যাটি ফিশ (ইলিশ, সুরমা, পুঁটি, পাবদা), সরিষার তেল, অলিভ অয়েল, নারকেল তেল ও খাঁটি ঘি খেতে পারেন পরিমিত পরিমাণে। গুড ফ্যাট ক্ষুধা কমায়, ইনসুলিন নিয়ন্ত্রণ করে এবং মেটাবলিজম বাড়ায়, যা ওজন কমাতে সহায়ক।
পানি ও হালকা ডিটক্স পানীয়: প্রতিদিন ২-৩ লিটার বিশুদ্ধ পানি পান করুন। মাঝেমধ্যে পান করুন লেবুপানি, জিরাপানি বা গ্রিন টি; যা হজম ও চর্বি কমাতে সহায়ক।
কী খাবেন না
রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেট যেমন সাদা চাল, ময়দা, সাদা পাউরুটি পরিহার করুন। ফাস্ট ফুড (পিৎজা, বার্গার), চিপস, ইনস্ট্যান্ট নুডলস, প্যাকেটজাত স্ন্যাকস, কেক, ডোনাট, সফট ড্রিংক ও প্যাকেটের জুস থেকেও দূরে থাকুন। এসব খাবার অতিরিক্ত ক্যালরি ও চিনি সরবরাহ করে, মেটাবলিজম ধীর করে এবং পেটের মেদ বাড়ায়।
শারীরিক কার্যক্রম ও ঘুম: নিয়মিত ব্যায়াম যেমন হাঁটা, সাইক্লিং বা সাঁতার শরীরের চর্বি কমাতে সহায়ক। প্রতিদিন অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম ও মানসিক প্রশান্তি ওজন কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ধৈর্য ধরে এ পদ্ধতিগুলো মেনে চললে শরীরকে সুস্থ রেখেই সব ধরনের খাবার খেয়েও ধীরে ধীরে আদর্শ ওজন লাভ করা সম্ভব।
বিশেষ পরামর্শ
খাবারের ধরনে পরিবর্তন আনুন ধাপে ধাপে, আমাদের শরীর ‘হোমিওস্টেসিস’ নামক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নতুন খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে ধীরে ধীরে মানিয়ে নেয়। ছোট প্লেটে খাবার খেতে হবে। খাবার খাওয়ার ১০ মিনিট আগে ও পরে পানি পান করতে হবে। খাবার ধীরে ধীরে ও ভালোভাবে চিবিয়ে খান। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে খাবার খাওয়ার রুটিন মেনে চলুন। প্রতি বেলার খাবার খাওয়ার পর অন্তত ১৫-২০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। রাত জেগে খাবার খাওয়া বা দেরিতে রাত ৯টার পর ডিনার করা বাদ দিন।
ওজন কমাতে ক্র্যাশ ডায়েট নয়– চাই ধৈর্য, পরিকল্পনা ও স্বাস্থ্যকর অভ্যাস। সবার শারীরিক চাহিদা আলাদা। তাই ওজন কমানোর জন্য ব্যক্তিগত গাইডলাইন পেতে অভিজ্ঞ নিউট্রিশনিস্টের পরামর্শ নিন। মনে রাখবেন নিয়মিত ব্যায়ামের সঙ্গে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ওজন কমানোর সর্বোত্তম উপায়।
লেখক: সিনিয়র ক্লিনিক্যাল পুষ্টিবিদ, লং লাইফ হাসপাতাল ঢাকা ও বায়োজিন কসমেসিউটিক্যালস