সরিষা ক্ষেতে প্রবেশ বন্ধে লাঠি হাতে চাষির পাহারা

উল্লাপাড়ায় এখন দিগন্ত জুড়া হলুদ প্রান্তর। সরিষা ফুলের এক মহাসমারহ। প্রতিদিনই প্রকৃতি প্রেমী ভ্রমণ পিপাসু নারী-পুরুষরা সরিষার মাঠে গিয়ে নানা সাজে, নানা আঙ্গিকে ছবি তুলছেন। কিন্তু এতে সমস্যায় পড়েছেন এসব সরিষার জমির মালিকরা। সরিষার জমিতে অতিরিক্ত মানুষের যাতায়াত, দাঁড়িয়ে বা বসে ছবি তোলার কারণে সরিষা গাছগুলো পদদলিত হয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। জমির মালিকরা বাধা দিয়েও তাদের জমিতে ছবি তোলা বন্ধ করতে পারছেন না। অনেক জমির মালিক তাদের মূল্যবান এই ফসল বাঁচাতে জমির মাঝে প্রবেশ না করতে বা ছবি না তোলার জন্য সাইন বোর্ড লাগিয়ে দিয়েছেন। অনেক জায়গায় নিরুপায় হয়ে সরিষা চাষি তার স্বজনদের নিয়ে লাঠি হাতে জমির পাশে দাঁড়িয়ে পাহারা দিচ্ছেন। বিশেষ করে উপজেলার কাশেম বিলে দর্শনার্থীদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এলাকায় এই বিষয়গুলো এখন রীতিমত আলোচিত হচ্ছে। 

উপজেলার বাখুয়া গ্রামের সরিষা চাষি সামাউন ইসলাম জানান, গত কয়েকদিনে তার সরিষার জমিতে বিভিন্ন শ্রেণির লোকজনের ছবি তোলার কারণে অনেক সরিষা গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। এভাবে সরিষার জমিতে দল বেধে লোকজন যাতায়াত করলে এক মুঠো সরিষাও এবার তার ঘরে উঠবে না। 

পৌর সভার শ্রীকোলা মহল্লার সরিষা চাষি আব্দুল হালিম, জাকির হোসেন ও শাহ আলম জানান, এ বছর সরিষা ফুলের মধ্যে সৌখিন লোকজনের ছবি তোলার মাত্রা বেশি দেখা যাচ্ছে। তারা তাদের জমিতে প্রবেশ না করে বাহিরে থেকে ছবি তোলার কথা বললেও তা মানছেন না কৌতূহলী দর্শনার্থীরা। এ জন্য তাদের জমিতে ছবি না তোলার ব্যাপারে সাইন বোর্ডও ঝুঁলিয়ে দিয়েছেন। তারপরও ছবি তোলার মাত্রা না কমায় এখন তারা মাঠের পাশে তাদের স্বজনদের সঙ্গে লাঠি নিয়ে সরিষার জমি দিনের বেলায় পাহারা দেওয়া শুরু করেছেন। 

উপজেলার পঞ্চক্রোশী এলাকা থেকে উধুনিয়া এলাকায় ঘুরতে আসা আব্দুল আলীম, সাকিব হোসেন, বৃষ্টি খাতুন ও বর্ষা খাতুন জানান, আসলে সরিষার জমির পাশ থেকে মনমতো ছবি তোলা যায় না। ফলে তাদেরকে সরিষার জমির মাঝে গিয়ে দাঁড়াতে হয়। এতে কিছু সরিষা অবশ্যই নষ্ট হয় বলে তারা স্বীকার করেন। সলপ এলাকা থেকে কাশেম বিলে ঘুরতে আসা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক যুবক জানান, এর আগেও তারা চলনবিল অধ্যুষিত এলাকায় সরিষা মাঠে ছবি তুলতে এসেছেন। কিন্তু দিনের বেলা লাঠি নিয়ে সরিষার জমির পাশে চাষিদের দাঁড়িয়ে পাহারা দেওয়ার দৃশ্য এবারই প্রথম তাদের চোখে পড়ল। 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুবর্ণা ইয়াসমিন সুমী জানান, আসলে এ বছর চলন বিল অধ্যুষিত এলাকায় সরিষা ফুল দেখতে প্রতিদিন প্রচুর দর্শনার্থী ভিড় করছেন। বেশির ভাগ ছেলে-মেয়ে জমিতে গিয়ে নানা ভঙ্গিতে ছবি তুলছেন। আবার কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরিষা ফুলের সৌন্দর্য লাইভ দেখাচ্ছেন। এতে সরিষার কিছু ক্ষতি হচ্ছে। তবে দর্শনার্থীদের কৃষকদের বিষয়টি মাথায় রেখে সচেতন ভাবে সরিষা মাঠের আইলে দাঁড়িয়ে ছবি তোলার জন্য আহ্বান জানান তিনি। 

দেশের উপজেলা পর্যায়ে উল্লাপাড়া উপজেলায় সবচেয়ে বেশি সরিষা উৎপাদন হয়ে থাকে। প্রতিবছর এখানে গড়ে ২৩ থেকে ২৪ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়। ফলে চলন বিল অধ্যুষিত বিস্তীর্ন এলাকার জমিতে ডিসেম্বর জানুয়ারি মাসে সরিষা ফুলের মহাসমারহ চোখে পড়ে। আর এখানে ঘুরতে ও ছবি তুলতে আসেন ভ্রমণ পিপাসু বহু নারী-পুরুষ।