নোয়াবের ২০ বছর পূর্তি
মুক্ত গণমাধ্যম ছাড়া আইনের শাসন, গণতন্ত্র কিছুই থাকে না
সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস আইন উপদেষ্টার

শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশান ক্লাবে নিউজ পেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়াব) ২০ বছর পূর্তি উপলক্ষে অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: সমকাল
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০ মে ২০২৫ | ০১:৩৩ | আপডেট: ১০ মে ২০২৫ | ১২:২১
মুক্ত গণমাধ্যম ছাড়া আইনের শাসন, গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার– কোনোকিছুই থাকে না। বর্তমান সরকার সাংবাদিকতার স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে। ফ্যাসিস্ট সরকার গণমাধ্যমের ক্ষেত্রে আইয়ামে জাহেলিয়াত কায়েম করেছিল। সংবাদ সম্মেলনগুলোকে তারা প্রশংসা-স্তুতির বিষয়ে পরিণত করে দেশের মানুষকে অপমান করত।
আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন নিউজ পেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়াব) ২০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশান ক্লাবে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি প্রধান অতিথি ছিলেন।
সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে খুনের মামলা দেওয়া প্রসঙ্গে আইন উপদেষ্টা বলেন, মিথ্যা মামলার বাদীদের বিরুদ্ধে প্রক্রিয়া অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই ব্যবস্থা তখনই নেওয়া যায়, যখন মামলাটি আদালতে মিথ্যা প্রমাণিত হয়। আমরা দায়িত্বে থাকলে ব্যবস্থা নেব, তা না হলে যারা ক্ষমতায় আসবে, আশা করি তারা নেবে। তিনি বলেন, ‘আমরা তদন্ত ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার না করতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছি।’
আসিফ নজরুল বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সাংবাদিক সংগঠনগুলোকে দলদাসে পরিণত করা হয়েছে। অথচ ৯০ দশকে স্বৈরশাসক এরশাদের পতনে এই সংগঠনগুলোর দারুণ ভূমিকা ছিল। তাদের নিরপেক্ষভাবে চলতে দিতে হবে।
অনুষ্ঠানে নোয়াব সভাপতি এ. কে. আজাদ বলেন, আমরা একটি স্বাধীন ও দলনিরপেক্ষ সাংবাদিকতার পরিবেশ চাই এবং এই পরিবেশ আগামীতেও অক্ষুণ্ন থাকবে– এমন নিশ্চয়তা চাই। তিনি বলেন, বর্তমানে সংবাদপত্র নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। ছাপা সংবাদপত্র এমনিতেই রুগ্ণ শিল্পে পরিণত হয়েছে। ছাপা পত্রিকার সার্কুলেশন ও বিজ্ঞাপন বাজার ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে। নোয়াব সভাপতি জানান, করোনা মহামারির সময় সব শিল্প প্রণোদনা পেলেও সংবাদপত্র শিল্প কিছুই পায়নি।
নোয়াবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, বাংলাদেশে সত্যিকার অর্থে স্বাধীন সাংবাদিকতা আমরা প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি। কোনো সরকারকে আমরা বোঝাতে পারিনি, সমালোচকরাই আপনাদের সত্যিকারের বন্ধু। তারা কেবলই প্রশংসা পছন্দ করেন। তিনি বলেন, মুক্ত গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠার জন্য এরশাদ সরকারের পতনের পর থেকে আমরা চেষ্টা করছি। গত ১৫ বছর তার আরও অবনমন ঘটেছে। সাম্প্রতিক সময়ে ২৬৬ জন সাংবাদিক খুনের মামলার আসামি হয়েছেন। এটা সারাবিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। মব কালচারের কারণে এসব সাংবাদিক অফিসে যেতেও ভয় পান। এই পরিবেশে স্বাধীন সাংবাদিকতা হতে পারে না।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা হত্যা মামলা দেওয়া প্রসঙ্গে বলেন, আমরা এ থেকে উত্তরণের চেষ্টা করছি। পুলিশি তদন্ত সবসময় সঠিক গতিতে এগোয় না। অন্তর্বর্তী সরকার চেষ্টা করছে মুক্ত গণমাধ্যম নিশ্চিত করতে। তিনি গণমাধ্যম কর্মীদের বেতন-ভাতা নিশ্চিত করতে নোয়াবের প্রতি আহ্বান জানান।
বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি আবদুল হাকিম। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন নোয়াবের সহসভাপতি এ এস এম শহীদুল্লাহ খান বাদল। অনুষ্ঠানের শুরুতে সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী ওয়ার্দা আশরাফ।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, ইনকিলাব সম্পাদক এএমএম বাহাউদ্দীন, প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও কালের কণ্ঠের সম্পাদক হাসান হাফিজ, মানবজমিনের সম্পাদক মাহবুবা চৌধুরী, ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ ও সমকালের সম্পাদক শাহেদ মুহাম্মদ আলী।
বিশিষ্টজনের মধ্যে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকসহ অংশ নেন ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মাহবুবুর রহমান, মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল, ট্রান্সকম গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সিমিন রহমান, সায়হাম গ্রুপের এমডি সৈয়দ শাফকাত আহমেদ, পূবালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান হাফিজ আহমেদ মজুমদার, বিসিআই সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ, অর্থনীতিবিদ মাসরুর রিয়াজ, বাংলাদেশ চেম্বারের ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রীতি চক্রবর্তী, ওরিয়ান গ্রুপের এমডি সালমান করিম, বিইআরসির চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, এবি পার্টির সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জু প্রমুখ।
- বিষয় :
- মুক্ত গণমাধ্যম
- নোয়াব