বাঁশফুলের দানার ভাত খাচ্ছে ফুলবাড়ীর মানুষ, এলাকায় চাঞ্চল্য
প্রতি কেজির দাম ৪০ টাকা

বাঁশফলের দানার চাল
আরিফুর রহমান
প্রকাশ: ২২ এপ্রিল ২০২৪ | ০৯:২৫ | আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২৪ | ১০:২১
ধানের বিকল্প হিসেবে বাঁশফুলের বীজ থেকে দানা সংগ্রহ করেছেন দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার এলুয়াড়ী ইউনিয়নের পাকাপান গ্রামের যুবক সাঞ্জু রায় (২৫)। এই দানা নিজের পরিবারের খাওয়ার পাশাপাশি বিক্রিও করছেন তিনি। সাঞ্জু ওই গ্রামের কৃষক ছিমল রায়ের ছেলে।
শনিবার সকালে সরেজমিন সাঞ্জু রায়ের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির পাশের ঝাড় থেকে বাঁশের বীজ সংগ্রহ করছেন তিনি। সেই বীজ পানিতে ধুয়ে পরিষ্কার করে রোদে শুকাচ্ছেন। এরপর সেগুলো ধানের হাসকিং মিলে ভাঙবেন। বাড়ির উঠানে প্রস্তুত করে রাখা এমন কয়েকটি বীজের বস্তা রেখেছেন। কিছু দানা ভাঙিয়ে রেখেছেন, গ্রামের অনেকেই তা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। বাঁশের ফুল থেকে চালের মতো উৎপাদন করার বিষয়টি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। এটি দেখতে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে উৎসুক মানুষ ভিড় করছেন তার বাড়িতে।
সাঞ্জু রায়ের প্রতিবেশী মিনতি রানী, সুনিল রায় ও লিপি রানী বলেন, ‘বাঁশের বীজ থেকে দানা সংগ্রহ করার বিষয়টি তারা প্রথমে ছেলেমানুষি ভেবেছিলেন। পরে তার এই দানা সংগ্রহ দেখে তাজ্জব বনে যান! বর্তমানে তার এই উৎপাদিত দানা অনেকেই কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এটি এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।’
এ বিষয়ে সাঞ্জু রায় বলেন, ‘আমি দিনমজুরি করে খাই। আজ থেকে এক মাস আগে পাশের গ্রামে কাজ করতে যাই। সেখানে কাজের ফাঁকে কালী চন্দ্র রায় (৭০) নামে একজন পরিচিত আমাকে বাঁশের বীজ থেকে দানা সংগ্রহ করে খাওয়ার বিষয়টি জানান। তার কথামতো আমি সেগুলো সংগ্রহ করে প্রথমে নিজে খাই, ভালো লাগায় এরপর থেকে তা সংগ্রহ করে যাচ্ছি। এতে নিজেদের খাবারের চাহিদাও পূরণ হচ্ছে, পাশাপাশি এই চাল ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে বাড়তি আয় করছি।’
এক প্রশ্নের জবাবে সাঞ্জু জানান, এটি বেশ কষ্টসাধ্য কাজ। প্রতিদিন ২০ কেজি বীজ সংগ্রহ করা যায়। এসব পরিষ্কার করে ভাঙিয়ে দানা বের করলে ধানের সমপরিমাণ চাল হয়।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রুম্মান আক্তার বলেন, ‘এটি গবেষণার বিষয়। গবেষণাপ্রতিষ্ঠান কোনো কৃষিপণ্য সার্টিফাই করলে, তখন আমরা সেই বিষয়ে সম্প্রসারণের কাজ করি।’
ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) আঞ্চলিক কার্যালয় রংপুরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. রকিবুল হাসান জানান, ‘বাঁশের বীজ থেকে চাল উৎপাদন হয় এই প্রথম জানলাম। দেশের কোথাও এমন ঘটনা শোনা যায়নি। এটি একটি বিরল ঘটনা। বিষয়টি নিয়ে আমরা শিগগিরই গবেষণার কাজ শুরু করব।’